ভূমিপুত্র সুরক্ষা ও ইনার লাইন সংক্রান্ত আইন বিধানসভায় পাশ হওয়ার প্রতিবাদে পদত্যাগ করলেন মণিপুরের চার এনপিএফ বিধায়ক। মাওয়ের বিধায়ক এল ডিখো, উখরুলের স্যামুয়েল রাইসম, চান্ডেলের ভিক্টর নুংলুং ও কারং-এর আলেকজান্ডার পাও বিধানসভা সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়ে যৌথ বিবৃতি দেন।
তাঁরা জানান, প্রোটেকশন অব মণিপুর পিপল বিল, মণিপুর ল্যান্ড রেভিনিউ এ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্ম আইনের সংশোধনী নাগা-বিরোধী এবং নাগা শান্তি প্রক্রিয়ার পরিপন্থী। তাঁদের মতে, বরাবরই মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ ও তাঁর মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য নাগা ও উপজাতিদের বিরোধী। প্রোটেকশন অব মণিপুর পিপল বিলে ভূমিপুত্রের সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভিত্তিবর্ষ ধরা হয়েছে ১৯৫১ সাল। ফলে, মণিপুরের পার্বত্য জেলাগুলিতে থাকা নাগাদের মণিপুরে থাকতে ইনার লাইন পারমিট লাগবে। চার নাগা বিধায়ক বলেন— ‘শুধু মেইতেইদের ভূমিপুত্র করে নাগাদের বহিরাগত চিহ্নিতকরণের চক্রান্ত চলছে।’
মণিপুরের চারটি পার্বত্য জেলায় নাগারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৯৬০ সাল থেকে চলে আসা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আইনে উপজাতি এলাকায় জমির অধিকার একান্ত ভাবেই উপজাতিদের হাতে ছিল। সেখানে অ-উপজাতিদের জমি কেনার অধিকার ছিল না। কিন্তু, সংশোধনীতে জেলাশাসকের অনুমতিক্রমে অ-উপজাতিরাও জমি কেনার অধিকার পেয়েছেন। নাগা বিধায়করা তারও তীব্র বিরোধিতা করেন। চান্ডেল ও তামেংলং জেলায় নাগারা ৩৭১সি ধারার অধীনে স্বশাসিত পরিষদ দাবি করেছিলেন। তাও মানেনি মন্ত্রিসভা।
তিনটি বিল ও সংশোধনী পাশ করার পাশাপাশি, বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে ভারত-নাগা শান্তি আলোচনায় বৃহত্তর নাগালিমের বিরোধিতা করে প্রস্তাব গ্রহণ করে মণিপুর বিধানসভা। বলা হয়, সংবিধানের তৃতীয় ধারা অনুযায়ী রাজ্যের সীমানা সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যেন রাজ্য বিধানসভার মতামত গ্রহণ আবশ্যিক হয়। বৃহত্তর নাগালিমের ধারণারও বিরোধিতা করা হয় প্রস্তাবে।
নাগা বিধায়কদের মতে, শান্তি আলোচনা নির্দিষ্ট রূপ পাওয়ার আগেই মণিপুর সরকার তা বানচাল করার চেষ্টা করছে। স্পিকার তিনটি বিল, সংশোধনী ও প্রস্তাবকে সর্বসম্মত বলে ঘোষণা করলেও এনপিএফ বিধায়করা দাবি করেন, তাঁরা মোটেই এগুলিতে সম্মতি দেননি। চার বিধায়ক তাঁদের ক্ষোভের কথা ও বেআইনি ভাবে মণিপুর বিধানসভায় বিল ও প্রস্তাব পাশ হওয়ার কথা রাজ্যপাল, রাষ্ট্রপতি, ভারত-নাগা শান্তি চুক্তির মধ্যস্থতাকারী, গির্জা কর্তৃপক্ষ, অন্যান্য নাগা দল-সংগঠনগুলিকে জানাবে। তাঁদের মতে, মণিপুরে ইবোবি সরকার থাকলে ভারত-নাগা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান কোনওদিন সম্ভব হবে না। চার বিধায়কের ইস্তফা স্পিকার গ্রহণ করলে মণিপুরে উপনির্বাচন হবে। বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ রয়েছে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত।