এক সময়ে তাঁদের দাপটে সংসদের সভাকক্ষ উত্তাল হয়ে উঠত। এক সময়ে তাঁদের নির্ধারিত নীতি দেশের আইনে পরিণত হত। আজ তাঁরাই নির্বাক। অটলবিহারী বাজপেয়ী, জর্জ ফার্নান্ডেজ, যশোবন্ত সিংহ এবং প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি।
বহু বছর ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। চলতি বছরের মার্চে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বাজপেয়ীকে ভারতরত্ন সম্মান দিতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তখনই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল।
বাজপেয়ীর বয়স তা-ও ৯০ বছর। কিন্তু প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির বয়স এখনও ৭০ ছোঁয়নি। অথচ সত্তরের দশকে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র পরিষদের রাজনীতি প্রিয়রঞ্জনকে ঘিরেই আবর্তিত হত। ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে জিতে তাঁর জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ। ১৯৮৫-তে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের দায়িত্ব পান। পরবর্তী কালে মনমোহন সিংহর প্রথম সরকারে তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন। দেশীয় রাজনীতিতে বরাবরই তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অনুপস্থিত। প্রথমে দিল্লির এইম্স, পরে বেসরকারি হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসাও তাঁকে সম্পূর্ণ সুস্থ করতে পারেনি।
জর্জ ফার্নান্ডেজ ভারতের সমাজবাদী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন। ট্রেড ইউনিয়নের নেতা হিসাবেই তাঁর পরিচিতি সর্বাধিক। রেল শ্রমিক ইউনিয়নের সর্বভারতীয় নেতা ছিলেন তিনি। জরুরি অবস্থার সময় জেলে গিয়েছিলেন। ‘ফায়ার ব্র্যান্ড’ নেতা হিসাবে পরিচিত জর্জ কেন্দ্রের শিল্পমন্ত্রী হিসেবে বেশ কিছু বহুজাতিক সংস্থার ভারতে ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দেন। কারগিল যুদ্ধের সময় তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তাঁর আমলেই পোখরান পারমাণবিক পরীক্ষা হয়। জর্জ ফার্নান্ডেজ ২০১০-এ অ্যালঝাইমার্স ও পারকিসন্স রোগে আক্রান্ত হন। হরিদ্বারে বাবা রামদেবের আশ্রমেও চিকিৎসা হয়েছিল তাঁর। কিন্তু লাভ বিশেষ হয়নি। জর্জের স্ত্রী লায়লা কবীর বলেন, ‘‘ওঁর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিদিন আরও অবনতির পথে।’’
রাজস্থানের যশোবন্ত সিংহ আশির দশকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসেন। পরবর্তী সময়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় বিভিন্ন দফায় বিদেশ, অর্থ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কন্দহর কাণ্ডে তিনজন জঙ্গিকে মুক্তি দিয়ে বহু সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। ২০১৪ সালের অগস্টে নিজের বাড়িতেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মস্তিষ্কে চোট পান যশোবন্ত। তার পর থেকেই কোমায় চলে যান প্রাক্তন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। যশোবন্তর পুত্র মহেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘আপাতত বাড়িতে হাসপাতালের সবরকম সুবিধা দিয়ে বাবাকে রাখা হয়েছে। সেবাযত্ন চলছে। বাকিটা ভগবানের হাতে।’’