উদ্বেগে মা। বিআরডি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। —ফাইল চিত্র।
চলতি মাসের গোড়ার দিকেই প্রায় ৭০টি শিশুর মৃত্যু এবং তাই নিয়ে বিস্তর হইচইয়ের পরেও গোরক্ষপুরে মৃত্যুমিছিল থামেনি। সেই বিআরডি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই গত ৭২ ঘণ্টায় মারা গিয়েছে আরও ৭টি শিশু। তফাৎ শুধু একটাই। এ বারে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ পরোক্ষে দোষ চাপিয়েছেন বাবা-মায়েদের উপরে। বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছে মা-বাবারা যেন ধরে নিয়েছেন, বাচ্চার দেখভাল করাটা সরকারেরই দায়িত্ব!’’ যদিও এত শিশুর মৃত্যুর দায় যে এত সহজে ঝেড়ে ফেলা যাবে না, সেটা সম্ভবত যোগী নিজেও বুঝছেন। বিপদ বুঝে তিনি বিধানসভায় না লড়ে বিধান পরিষদে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিজেপি আজ ঘোষণা করেছে, মুখ্যমন্ত্রী, দুই উপমুখ্যমন্ত্রী ও দুই মন্ত্রী বিধান পরিষদের প্রার্থী হবেন। ১৮ সেপ্টেম্বর এই উপনির্বাচন। সরাসরি আমজনতার ভোটে নির্বাচিত হন না বিধান পরিষদের সদস্যেরা। রাজ্যের ১০০ সদস্যের বিধান পরিষদে ১০ জনকে মনোনয়ন দেন রাজ্যপাল। বাকিরা নির্বাচিত হন বিধায়ক, স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষক ও স্নাতকদের ভোটে। ফলে যোগীদের জয় নিশ্চিত। যোগী অবশ্য আগে জানিয়েছিলেন, বিধায়ক পদে লড়তে চান। অমিত শাহেরও সম্মতি ছিল তাতে।
বুধবারই গোরক্ষপুরের বিআরডি হাসপাতালের অধ্যক্ষ পি কে সিংহ জানিয়েছেন, এক মাসে সেখানে মারা গিয়েছে মোট ২৯০টি শিশু। এক বছরে সংখ্যাটা ১ হাজার ২৫০। এদের একটা বড় অংশেরই এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। রোগের প্রকোপ আটকাতে সরকার তবে কী করছে? প্রশ্নটা উঠতেই যোগী আজ বলে ওঠেন, সব দায়িত্ব সরকারের একার নয়। তাঁর কথায়, ‘‘যেখানে-সেখানে আবর্জনা পড়ে আছে বলে দেখাচ্ছে সংবাদমাধ্যম। এটুকু বলেই দায়িত্বমুক্ত হতে চাইছে সকলে। মানছি, পরিষ্কার করা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু এমন না হয়, বাচ্চার দু’বছর বয়স হলেই মা-বাবা তাকে সরকারের ভরসায় ছেড়ে দেবেন, আর সরকারই তার পালনপোষণ করবে!’’
প্রত্যাশিত ভাবেই এ নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। যোগীর ইস্তফা দাবি করেছেন কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি রাজ বব্বর। তাঁদের অভিযোগ, শিশুমৃত্যু ঠেকাতে না পেরে দায়িত্ব এড়াতে চাইছে বিজেপি। ভোট প্রচারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এক বছরের মধ্যে এনসেফ্যালাইটিস নির্মূল হবে। তার কী হল? প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহ অভিযোগ করেন, ‘‘বিজেপি-শাসিত সব রাজ্যেরই এক ছবি। এতেই স্পষ্ট, বিষয়টি নিয়ে মোদী ও যোগী কতটা সংবেদনশীল!’’
বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে শিশুমৃত্যুর বিভিন্ন ঘটনা সামনে এসেছে সম্প্রতি। রাজস্থানে বাঁসবাড়ার এমজি হাসপাতালে এ বছর মারা গিয়েছে ২৩৬টি শিশু। তার মধ্যে ৮১টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে গত ৫৩ দিনে। ছত্তীসগঢ়ে ৩টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ, মদের নেশায় অক্সিজেন বন্ধ করে দিয়েছিল হাসপাতালের কর্মীরা। জোধপুরে উমেদ হাসপাতালে আজ ওটি-তে চিকিৎসকদের বচসার জেরে মৃত্যু হয়েছে সদ্যোজাতের। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের নির্বাচনী কেন্দ্র জামশেদপুরে এক মাসে মৃত্যু হয়েছে ৬০টি শিশুর। চার মাসে ১৬৪। রাঁচীর একটি হাসপাতালে ২৮ দিনে মারা গিয়েছে ১৩৩টি শিশু। শিশুদের এই মৃত্যুমিছিল বিজেপির গলার কাঁটা হয়ে উঠছে। মোদী নিজে আজ গোরক্ষপুরে এইমস তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করার কথা বলেছেন। আর শিশুমৃত্যু নিয়ে নাজেহাল যোগী এখন আর জনতার রায় নেওয়ার ঝুঁকি নিতেই পিছপা।