প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
গত লোকসভা ভোটের আগে ২০১৮-১৯-এর বাজেটে মোদী সরকার ঘোষণা করেছিল, চাষের খরচের দেড়গুণ ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি ঘোষণা করা হবে। চাষিরা যাতে সত্যিই চাষের খরচের দেড় গুণ এমএসপি পান, তা নিশ্চিত করতে ভাবা হয়েছিল, সরকারই এমএসপি-র দরে সব ফসল কিনে নিতে পারে।
এটা বাস্তবে সম্ভব কি না বা অন্য কোনও ভাবে চাষিদের এমএসপি পাইয়ে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে সরকারের অন্দরে টানাপড়েনের মধ্যে একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রশ্ন তুলেছিলেন, আগে কি কখনও সরকার সমস্ত ফসল কিনে নিয়েছে? যদি আগে কখনও না হয়ে থাকে, তা হলে এখন সরকারের সমস্ত ফসল কেনার কী দরকার?
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ তাঁর সদ্য প্রকাশিত ‘উই অলসো মেক পলিসি’ বইতে লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রশ্নের পরেই গোটা আলোচনা অন্য খাতে ঘুরে যায়। তার আগে পর্যন্ত আলোচনা চলছিল, এমএসপি ঘোষণার পাশাপাশি সরকার কী ভাবে চাষিদের এমএসপি পাইয়ে দিতে পারে? নিজেই ফসল কিনে নিয়ে? না কি ভর্তুকি দিয়ে? প্রধানমন্ত্রী আদৌ তার দরকার রয়েছে কি না প্রশ্ন তোলার পরে ঠিক হয়, আগের মতোই সরকার মূলত ধান-গম কিনবে। বাকি ফসলের এমএসপি ঘোষণা করেই দায় সারবে।
পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকরা নতুন করে এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। তাঁদের যুক্তি, মোদী সরকার কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথনকে ভারতরত্ন দিচ্ছে। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে চাষের খরচের দেড় গুণ ফসলের দাম ঘোষণা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু চাষিরা যাতে সেই এমএসপি পান, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। এই প্রেক্ষিতে প্রাক্তন অর্থসচিবের বইয়ে প্রকাশিত তথ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে বিরোধী শিবির মনে করছে।
চাষিদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধী মঙ্গলবারই ঘোষণা করেছিলেন, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র সরকার ক্ষমতায় এলে এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি দেবে। বিজেপি শিবির পাল্টা অভিযোগ তুলেছে, ইউপিএ সরকারের আমলে ২০০৭-এ কৃষকদের জাতীয় নীতি তৈরি হয়েছিল। তখন স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে ইউপিএ সরকার চাষের খরচের দেড় গুণ এমএসপি-র সুপারিশই গ্রহণ করেনি। ২০১০-এ মনমোহন সরকারের কৃষিমন্ত্রী কে ভি থমাস সংসদে প্রশ্নের উত্তরে সে কথা জানিয়েছিলেন। এখন রাহুল গান্ধী হার ঠেকাতে মরিয়া হয়ে অবাস্তব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সরকারি সূত্রের দাবি, এমএসপি-র গ্যারান্টি দিতে গেলে সরকারকে বছরে ১০ থেকে ১১ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। উন্নয়নের অন্য খাতে খরচের অর্থ থাকবে না।
পাল্টা যুক্তিতে কংগ্রেসের দাবি, নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় নীতি আয়োগের উপ-কমিটির প্রধান হিসেবে এমএসপি-র সুপারিশ করেছিলেন। এখন তিনি নিজের সুপারিশ মানছেন না। সরকারি শিবির থেকে ১১ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে বলে মিথ্যে ছড়ানো হচ্ছে। বাস্তব হল, এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি দিলেই যে সরকারকে সব ফসল কিনতে হবে, এমন নয়। বাজারে এমএসপি-র তুলনায় দাম কমে গেলে তবেই সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। নচেৎ নয়। কংগ্রেস সংযুক্ত কিসান মোর্চার ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘গ্রামীণ বন্ধ’ সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ রাহুল গান্ধী এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, “মোদী ও তাঁর প্রচারযন্ত্র গরিব, কৃষকদের শত্রু। মোদী সরকার বন্ধু শিল্পপতিদের লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মাফ করে দিতে পারে। কিন্তু কৃষকদের এমএসপি-র গ্যারান্টির বিষয় এলেই প্রশ্ন তোলা হয়। কংগ্রেসের এমএসপি-র গ্যারান্টি দেওয়ার ফয়সালা মাইলফলক হবে। গ্রামীণ অর্থব্যবস্থা ও কোটি কোটি কৃষকের জীবন বদলাবে এই সিদ্ধান্ত।”