ভিন্ রাজ্যে কিডনি খুইয়ে ভূস্বর্গে ভিক্ষা

পাচারের শিকার শুধু মেয়েরা নন। নিজের দেশেরই নানা প্রান্তে পাচার হয়ে গিয়ে, কিডনির মতো প্রত্যঙ্গ খুইয়ে ভিক্ষে করে দিন গুজরান করতে হচ্ছে বাংলার বহু পুরুষকেও।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০৩:৫৭
Share:

পাচারের শিকার শুধু মেয়েরা নন। নিজের দেশেরই নানা প্রান্তে পাচার হয়ে গিয়ে, কিডনির মতো প্রত্যঙ্গ খুইয়ে ভিক্ষে করে দিন গুজরান করতে হচ্ছে বাংলার বহু পুরুষকেও।

Advertisement

কাজের আশায় শ্রমিক-ঠিকাদারের টোপ গিলে ভিন্‌ রাজ্যে গিয়ে কিডনি খুইয়ে কাশ্মীরে ভিক্ষা করছেন, বীরভূমের মাড়গ্রামের এমন তিন বাসিন্দার খোঁজ মিলেছে এক ফৌজি চিঠিতে। মাড়গ্রাম বিষ্ণুপুরের বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বছর নয়েক আগে বিষ্ণুপুরের লব দলুইকে কাজের জন্য হায়দরাবাদে নিয়ে যান মালদহের কালিয়াচক-দয়িরাপুরের বাসিন্দা মুক্তার শেখ। তিনি বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল খাঁ-র বাড়িতে থেকে শ্রমিক-ঠিকাদারের কাজ করতেন। লব আর ফেরেননি। তাঁর স্ত্রী দশমী ২০০৯ সালে পুলিশের কাছে স্বামীর অন্তর্ধানের অভিযোগ দায়ের করেন। বছর পাঁচেক আগে বিষ্ণুপুরের কোনাইপাড়ার নারায়ণ মেহেনা ও মানিক ধীবরকে কাজের জন্য পুণেতে নিয়ে যান শ্রমিক-ঠিকাদার সিরাজুল এবং তাঁর ভাই মধু খাঁ। নারায়ণ বা মানিকও আর বাড়ি ফেরেননি। তাঁদের খোঁজ পেতে ঠিকাদরের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও আমল দেওয়া হয়নি বলে তিন শ্রমিকের স্বজনদের অভিযোগ।

Advertisement

গত বুধবার বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য নন্দদুলাল দাসের কাছে চিঠি পাঠান প্রকাশ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি। তাতে কাশ্মীরের পুরামেড সেক্টরের ফৌজি সুবেদার বলে নিজের পরিচয় দিয়ে প্রকাশবাবু লিখেছেন, তিনি শ্রীনগরের খাঁ বাজার এলাকায় ভিক্ষা করতে থাকা তিন শ্রমিককে বাংলায় কথা বলতে দেখে পরিচয় জানতে চান। নারায়ণ, মানিক ও লব তাঁকে জানান, ২১ লক্ষ টাকায় তাঁদের কিডনি বিক্রি করেছেন সিরাজুলেরা। তিন জন প্রকাশবাবুকে বলেন, নন্দদুলালবাবুকে চিঠি লিখলে ওই তিনি তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। চিঠিতে প্রকাশবাবু জানান, তিনি নদিয়ার বাসিন্দা।

ওই চিঠি পেয়ে তিন জনকে উদ্ধারের জন্য এসডিও এবং এসডিপিও-র কাছে আবেদন জানান নন্দদুলালবাবু। গত বৃহস্পতিবার মাড়গ্রাম থানায় ছেলের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন নারায়ণের মা অঞ্জলি মেহেনা। পাঁচ বছর পরে ছেলের খবর পেয়ে তাঁর আবেদন, ‘‘জোড়হাত করে বলছি, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনো।’’

ওই দিনেই নন্দদুলালের সঙ্গে দেখা করতে যান সিরাজুল। নন্দদুলালবাবুর কথায়, ‘‘সিরাজুল আমার কাছে এসেছিল। সেই সময়ে গ্রামের লোক তাকে ঘিরে মারধর শুরু করে। পুলিশকে এসে সিরাজুলকে নিয়ে যায়।’’ পুলিশি হাজতে রয়েছেন সিরাজুল। বীরভূমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবিমল পাল বলেন, ‘‘এক জন গ্রেফতার হয়েছে। চিঠি-সহ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ মধু ও মুক্তার এখনও পলাতক।

শনিবার লব ও নারায়ণের বাড়িতে যান বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি সামিরুল ইসলাম এবং তাঁর সঙ্গীরা। সামিরুল বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা বীরভূম ছাড়াও অন্য জায়গাতেও ঘটছে। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement