উত্তরকাশীতে এই সুড়ঙ্গের একাংশ ভেঙেই বিপর্যয় ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত।
নির্মাণকাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র। সেই নির্মাণকাজ করতে গিয়েই এখন জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র। এক ছেলেকে হারিয়েছেন। কিন্তু শেষ সম্বলকে খড়কুটোর মতো বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন উত্তরপ্রদেশের চৌধরি লাল। গত রবিবার থেকে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে ভগ্ন সুড়ঙ্গের মধ্যে যে ৪০ জন শ্রমিক আটকে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন লালের কনিষ্ঠ পুত্র মনজিৎও।
গত ছ’দিন ধরে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি লালের পরিবার। ঠিক একই হাল বাকি শ্রমিকদের পরিবারেরও। টানা ছ’দিন ধরে চলছে উদ্ধারকাজ। সুড়ঙ্গের বাইরে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে লাল। সেই সময়ই পরিবারে অতীতের বিপর্যয়ের কাহিনি শোনালেন তিনি। বললেন, ‘‘আমার বড় ছেলের তখন ৩৬ বছর বয়স। মুম্বইয়ে একটা বহুতলের নির্মাণ স্থলে তড়িদাহত হয়ে ওর মৃত্যু হয়।’’ এ কথা বলতে বলতেই ভেঙে পড়লেন লাল। নিজেকে সামলে নিয়ে কাতর স্বরে বললেন, ‘‘আরও এক পুত্রকে হারানোর শোক সহ্য করতে পারব না।’’
উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মকাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের কাজে দু’মাস আগেই যোগ দিয়েছিলেন ২২ বছরের মনজিৎ। রবিবার ওই নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের একাংশ ভেঙে পড়ে। ওই খবর পাওয়া মাত্রই ভেঙে পড়েছে লালের পরিবার। তড়িঘড়ি ওই সুড়ঙ্গের কাছে পৌঁছেছেন লাল। দিন কাটছে উৎকণ্ঠায়। মনজিতের খবর নিতে পৌঁছেছেন তাঁর কাকা শত্রুঘ্ন লালও। তাঁর কথায়, ‘‘মনজিতের দুই বোন রয়েছে। ওর মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাঁধুনি। এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন সকলে। মনজিৎ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক, এটাই চাই।’’
সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের পাইপের সাহায্যে খাবার, অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। তবে এখনও কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই শুক্রবার দুপুরে খননযন্ত্র দিয়ে সুড়ঙ্গের মুখে আটকে থাকা পাথর সরানোর সময় জোরে ফাটল ধরার শব্দ পান উদ্ধারকারীরা। তার পর থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে উদ্ধারকাজ। উদ্ধারকারীদের ধারণা, সুড়ঙ্গের ভিতরে আরও একটি ধস নেমেছে। উদ্ধারকাজ চালিয়ে নিয়ে গেলে আরও ধস নামতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের কী ভাবে উদ্ধার করা হবে, তা ঠিক করতে বিশেষজ্ঞদের একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও।