বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে।- ফাইল চিত্র।
একের পর এক নির্বাচনে জয়ের পর যাদের‘বোঝা’ বলে মনে করা হচ্ছিল, বিপদে পড়ে এখন তাদের কাছেই ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
তাই বিজেপি-র কাছে প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী বা যশবন্ত সিনহারা এখন আর ‘ব্রাত্য’ নন। আগামী লোকসভা ভোটে তাঁদের ফের দলীয় প্রার্থী করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
‘শত্রু’ নয় শিবসেনা বা শিরোমণি অকালি দলের মতো শরিকরাও। বিজেপি নেতাদের কাছে তারা এখন আর ‘বোঝা’ নয়, ‘বন্ধু’ই। সৌজন্যে অবশ্যই হালে ১০ রাজ্যে বিধানসভা ও লোকসভা উপনির্বাচনের ফলাফল।
ভোট যে বড় বালাই, তা বোঝাই যাচ্ছে, যখন চার বছর আগে লোকসভা ভোটের পর এই প্রথম এনডিএ জোটের সবচেয়ে পুরনো শরিক দল শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে নিজেই দেখা করতে চেয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। ক’দিন আগে মহারাষ্ট্রে উপনির্বাচনের পর যে বিজেপিকে ‘সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শত্রু’ বলেছিল প্রয়াত বাল ঠাকরের দল, সেই শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে দেখা করার জন্য যেচে তাঁর অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছেন অমিত। আর বৈঠকের কোনও নির্ধারিত সূচি ছাড়াই বিজেপি সভাপতিকে সেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়েছে।
উদ্ধবের সঙ্গে দেখা করতে মুম্বইয়ে আসছেন অমিত। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় শিবসেনা প্রধানের বাড়ি ‘মাতোশ্রী’-তে উদ্ধবের সঙ্গে দেখা করবেন অমিত। সেখান থেকে যাবেন চণ্ডীগড়ে। আর এক শরিক শিরোমণি অকালি দল নেতা প্রকাশ সিংহ বাদল ও তাঁর পুত্র সুখবীর বাদলের সঙ্গে দেখা করতে।
শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘‘উদ্ধবজীর সঙ্গে দেখা করতে সময় চেয়েছিলেন অমিত শাহ। বৈঠকের কোনও অ্যাজেন্ডা নেই। ‘মাতোশ্রী’তে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানোটা শিবসেনার সংস্কৃতি।’’
আরও পড়ুন- চাপে পড়ে গুরুদক্ষিণা! লোকসভায় আডবাণীকে প্রার্থী করতে চান মোদী
আরও পড়ুন- ‘লিখে নিন, আর কোনও বিজেপি কর্মী খুন হবে না, কী ভাবে রুখতে হয় দেখাব’
এনডিএ জোটে বিজেপি-র সবচেয়ে পুরনো শরিক শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্কের অবনতি ঘটতে শুরু করে ২০১৪-র লোকসভা ভোটের পর থেকেই।
শিবসেনার সমর্থনে বিজেপি মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় থাকলেও রাজ্যে হালের উপনির্বাচনে দু’দল নামে একে অন্যের বিরুদ্ধে। শিবসেনা প্রার্থীকে হারিয়ে পালঘাড় লোকসভা আসনটি বিজেপি জিতলেও ভোটের ব্যবধান যথেষ্টই কমে যায়।শিবসেনা সঙ্গে না থাকায় ভান্ডারা-গোন্ডিয়া আসনটিও বিজেপির হাতছাড়া হয় শরদ পওয়ারের দল এনসিপি এবং কংগ্রেসের জোটের কাছে।
শিবসেনার ক্ষোভের কারণ, ছোট শরিকদের প্রতি বিজেপির দাদাসুলভ আচরণ। শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত রবিবার দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’য় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে লেখেন, ‘‘শিবসেনার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শত্রু বিজেপি। মানুষ কংগ্রেস এবং জেডি (এস) প্রধান এইচ ডি দেবেগৌড়াকে এক সঙ্গে দেখতে চান। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহকে এক সঙ্গে দেখতে চাইছেন না।’’
শুধু শিবসেনাই নয়, আর এক শরিক শিরোমণি অকালি দলের সঙ্গেও যে মনকষাকষি চলছে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের, তা মেটাতে বৃহস্পতিবারই চণ্ডীগড়ে অকালি নেতা প্রকাশ সিংহ বাদল ও তাঁর ছেলে সুখবীরের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বিজেপি সভাপতি।
এরই পাশাপাশি বিহারে বিজেপি সভাপতি নিত্যানন্দ রাই নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জোট শরিকদের। বিজেপি-র সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে গিয়ে সংযুক্ত জনতা দল নেতা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার গত বছরেই সঙ্গ ছেড়েছিলেন বহু দিনের বন্ধু লালুপ্রসাদের দল আরজেডি-র। হালের উপনির্বাচনে সেই আরজেডির কাছে জোর ধাক্কা খেতে হয়েছে নীতীশের সংযুক্ত জনতা দলকে।