সৈয়দপুরের বাড়িতে মেয়ে ও নাতনির সঙ্গে আফরাজুলের স্ত্রী গুলবাহার। নিজস্ব চিত্র
এক বছর আগে তাঁর স্বামী আফরাজুল খান নৃশংস ভাবে খুন হন রাজস্থানের রাজসামন্দে। এখনও পর্যন্ত রাজস্থান সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ কয়েক লাখ টাকা এবং মামলার চার্জশিটের একটি কপি ছাড়া কিছুই পাননি কালিয়াচকের গুলবাহার বিবি। খুনের তদন্ত কত দূর, তা-ও জানেন না। জানার জন্য রাজস্থানে যাওয়ার সাহসও ছিল না। মঙ্গলবার সেই রাজ্যে বিজেপি হেরে যাওয়ার পরে পরিবারটি মুখে আশার আলো। গুলবাহার বলছেন, ‘‘রাজস্থানে কংগ্রেস জেতায় কিছুটা সাহস পাচ্ছি। এ বারে হয়তো ন্যায় বিচার হবে। প্রয়োজনে সেখানে যেতেও পারব।’’
শুধু গুলবাহারই নন, রাজস্থানে বিজেপির পতনে সাহস পাচ্ছেন আফরাজুলের আত্মীয়, পড়শিরাও। গত বছর ৬ ডিসেম্বর রাজসামন্দে আফরাজুলকে কুপিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। এই নিয়ে একটি ভিডিয়ো প্রথমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, ‘লাভ জেহাদের’ অভিযোগ তুলে শম্ভুলাল রেগার নামে এক ব্যক্তি আফরাজুলকে খুন করছে।
ভিডিয়োটি ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। গ্রেফতার করা হয় শম্ভুলালকে। আফরাজুলের দেহ নিয়ে ফিরে আসেন তাঁর ভাই রুম খান, বড় মেয়ের জামাই মোসরাফ খান। একই সঙ্গে দিনমজুরির কাজ ফেলে ঘরে ফিরে আসেন কালিয়াচকের সৈয়দপুরের বাসিন্দা মীর ডালিম, জুয়েল শেখদের মতো অনেকে। রুম বা জুয়েল, তাঁরা কেউই আর রাজস্থানে ফিরে যাননি।
আরও পড়ুন: পাঁচ রাজ্যে ভোটের ধাক্কা সামলাতে শেষমেশ ভরসা খয়রাতি!
রুম খান বলেন, ‘‘তখন বিজেপির সরকার। ভয় পাচ্ছিলাম, যদি আমাদের অবস্থাও আফরাজুলের মতো হয়!’’ গুলবাহার বলেন, ‘‘স্বামী খুন হওয়ার পরে রাজস্থানের বিজেপি সরকারের তরফে এক দিন এক জন সরকারি কর্মী এসে শুধু ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে চলে গিয়েছেন। তার পর এক বছরে ওই সরকারের তরফে আর কেউই খোঁজ নেয়নি। মামলার চার্জশিটের কপি ডাকযোগে পাঠানো ছাড়া সেই সংক্রান্ত বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘মামলাটি কী অবস্থায় আছে, তা জানার কোনও উপায় নেই। আতঙ্কে কেউ রাজস্থানে যাচ্ছেন না এখান থেকে।’’
আরও পড়ুন: লোকসভায় ভোট আসবে কোথা থেকে? উনিশের বিপদই ভাবনা বিজেপির
স্থানীয় মানুষেরা বলছেন, গুলবাহারের আতঙ্ক অমূলক নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা খবর দেখেই জানতে পেরেছিলেন, যোধপুর জেলে বসেও শম্ভুলাল একটি বিদ্বেষমূলক ভিডিয়ো তৈরি করে অন্তর্জালে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। সৈয়দপুরের বাসিন্দাদের কথায়, এ সব জানার পরে গ্রামের মানুষ আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চাইছে কংগ্রেস। সুজাপুরের বিধায়ক ইশা খান চৌধুরী বলেন, ‘‘রাজস্থানে বিজেপি সরকার থাকায় আফরাজুল খুনের মামলাটি নিয়ে আমরাও কিছু করতে পারিনি। এ বার দ্রুত যাতে মামলার বিচার হয় সে জন্য উদ্যোগী হব।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘আমরাও বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে নতুন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করব।’’