কাবুলে তালিবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরান বিষয়ক যুগ্মসচিব জেপি সিংহ। ছবি: এক্স।
কাশ্মীর সমস্যার সঙ্গে আফগানিস্তানের কোনও সম্পর্ক নেই। জয়েশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও নাশকতা চালাতে দেওয়া হবে না। কাবুলে ক্ষমতা দখলের তৃতীয় বছরে আবার সে কথা জানিয়ে দিল তালিবান শাসকগোষ্ঠী।
২০২১-এর অগস্টে দ্বিতীয় বারের জন্য আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পরেই কাবুলে সাংবাদিক বৈঠকে তালিবান মুখপাত্র জবিউল্লা মুজাহিদ বলেছিলেন, ‘‘কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়। কাশ্মীরে আমাদের কোনও নজর নেই।’’ স্পষ্টতই এ ক্ষেত্রে জবিউল্লা ‘দু’পক্ষ’ বলে ভারত এবং পাকিস্তানকেই বোঝাতে চেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখন কারও সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক তৈরি করতে চাই না।’’
যদিও তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমরের জমানায় একাধিক বার কাশ্মীরে সক্রিয় পাক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে তালিবান। এমনকি, ১৯৯৯ সালে ভারতীয় বিমান ছিনতাইকারী জঙ্গিদেরও আশ্রয় দিয়েছিল তারা। এমনকি, ২০১৯ সালে পাকিস্তানের সুরে সুর মিলিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলেরও সমালোচনা করেছিল আফগান তালিবান বাহিনী।
তালিবানের এই অবস্থান বদল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ‘বড় সাফল্য’ বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। যদিও আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলের প্রায় তিন বছর পরেও নয়াদিল্লির তরফে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি তালিবান সরকারকে। এখনও সরাসরি দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও স্থাপিত হয়নি। তবে ২০২১-এ কাবুলের পতনের পরেই কাতারের রাজধানী দোহায় ভারতীয় দূতাবাসে তালিবানের দোহা দফতরের ভারপ্রাপ্ত নেতা শের মহম্মদ আব্বাস স্তানেকজাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন কাতারে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তল।
এর পর আরও চার দফায় দু’দেশের অঘোষিত কূটনৈতিক স্তরের আলোচনা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চে বিদেশ মন্ত্রকের পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরান বিষয়ক যুগ্মসচিব জেপি সিংহ-সহ ভারতীয় কূটনীতিকদের একটি দল কাবুলে গিয়ে বৈঠক করেন তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী ওয়াকিল আহমেদ মুত্তাওয়াকিলের সঙ্গে। তালিবান সরকারের তরফে জানানো হয়, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, ট্রানজিট রুটের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, দুর্নীতি মোকাবিলা এবং আইএস (খোরাসান) জঙ্গিদমনের মতো বিষয়ে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে। তার পরেই তালিবানের তরফে এল ‘কাশ্মীর থেকে দূরে থাকার’ বিবৃতি।