মায়ানমার থেকে বাংলাদেশের পথে নৌকাডুবিতে মৃত্যু হয়েছে সন্তানের। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে পৌঁছে মৃত শিশুকে আঁকড়ে ধরে মায়ের কান্না। ভারত থেকে ওই শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে চাইলেও বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠাচ্ছে দিল্লি। ছবি: এপি।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে জনস্বার্থ মামলায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের হলফনামা নিয়ে তুমুল বিভ্রান্তি ছড়াল আজ।
ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে চায় মোদী সরকার। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের একাংশ দাবি করে, আজ এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়েছে কেন্দ্র। তাতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জঙ্গি যোগ রয়েছে। জম্মু, দিল্লি, হায়দরাবাদ ও মেওয়াটে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা সক্রিয়। তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসে যোগ দিতে পারে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। ফলে ওই শরণার্থীদের ভারতে থাকতে দেওয়া সম্ভব নয়। সংবাদমাধ্যমের একাংশ দাবি করে, ওই হলফনামায় সরকার জানিয়েছে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশকারী। তাই তাঁরা এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হতে পারেন না।
কিন্তু পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু জানান, শীর্ষ আদালতে আদৌ হলফনামা দেয়নি কেন্দ্র। ওই হলফনামা তৈরির চূড়ান্ত কাজ চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের দাবি, আইন মন্ত্রকে হলফনামা চূড়ান্ত করা হচ্ছিল। ‘ভুল করে’ তা আইনজীবীদের কাছে চলে গিয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, এমন ভুল হয় কি করে? না কি অবস্থান বদলের কথা ভাবছে সরকার? সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছে, এমন কথাই বা রটল কী ভাবে?
রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান নামল চট্টগ্রামে। বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও বাংলাদেশের সড়ক-সেতু মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের (ডান দিক থেকে প্রথম ও দ্বিতীয়)। নিজস্ব চিত্র
তবে ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে মোদী সরকারের অবস্থান যা-ই হোক, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধ্য হচ্ছে তারা। তাই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সাহায্য পাঠাচ্ছে দিল্লি । ‘অপারেশন ইনসানিয়ত’ নামের এই অভিযানে মোট ৭ হাজার টন ত্রাণ সামগ্রী পাঠাবে দিল্লি। তার প্রথম দফায় আজ ভারতীয় বায়ুসেনার একটি বিশালাকায় মালবাহী বিমান ৫৫ টন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামে। বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন বাংলাদেশের সড়ক ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে।
ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রিংলা বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল বাংলাদেশে এক নতুন সঙ্কট ডেকে এনেছে। এই সময় ভারত বাংলাদেশের মানুষের পাশে রয়েছে।’’ পাঠানো ত্রাণের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, চিনি, নুন, ভোজ্য তেল, চা, তৈরি খাবার এবং মশারি, তাঁবু ও ওষুধের মতো নানা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, রোহিঙ্গা প্রশ্নে চিন মায়ানমারের পাশে রয়েছে। বাংলাদেশেও চিনা প্রভাব বাড়ছে। তাই পাল্টা কৌশল হিসেবে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য বিপুল ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে ভারত।