National News

সনিয়া-মনমোহনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন আডবাণী, অস্বস্তি বিজেপির

সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। অরুণ জেটলি, অনন্ত কুমার, রবিশঙ্কর প্রসাদরা থমকে দাঁড়ালেন আডবাণীর ডাক শুনে। তার পরই কংগ্রেস সভানেত্রী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তিনি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৯:৫৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। অরুণ জেটলি, অনন্ত কুমার, রবিশঙ্কর প্রসাদরা থমকে দাঁড়ালেন আডবাণীর ডাক শুনে। তার পরই কংগ্রেস সভানেত্রী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তিনি। দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী তথা দলের প্রবীণ সাংসদের এই প্রস্তাব মুখের উপর খারিজ করতে পারেননি জেটলিরা। কিন্তু আডবাণীর প্রস্তাব মেনে নেওয়ার প্রশ্নে কোনও ইতিবাচক ইঙ্গিতও তাঁরা দেননি বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

Advertisement

শত্রু সম্পত্তি আইন নিয়ে বেজায় বেকায়দায় পড়েছে সরকার। সেই সমস্যার সমাধান খুঁজতেই লালকৃষ্ণ আডবাণী কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেন। তিনি নিজে কথা বলতে রাজি, এমনও জানান। কিন্তু বিজেপি-র বর্তমান নিয়ন্ত্রকরা যে কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন, তা আডবাণীকে প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সংসদীয় দলের বৈঠক শেষে জেটলির সঙ্গে কথা বলছেন আডবাণী। ছবি: পিটিআই।

Advertisement

যে আইনটি নিয়ে সমস্যা, সেটি ৪৮ বছরের পুরনো। কিন্তু পরবর্তী কালে আইনের কিছু ফাঁক নজরে আসে। তার জেরে উত্তরপ্রদেশে রাজা মাহমুদাবাদের যে বিপুল সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল, তা হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়। দেশ ভাগের পর এই রাজা ভারত ছেড়ে চলে যান। তিনি পাকিস্তান, ইরাক-সহ বিভিন্ন দেশে থাকতে শুরু করেন। ভারতের শত্রু সম্পত্তি আইন অনুযায়ী, যুদ্ধের পর যাঁরা দেশ ছেড়ে পাকিস্তান বা চিনে চলে গিয়েছেন, তাঁদের সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করতে পারে। রাজা মাহমুদাবাদের সম্পত্তিও সেই আইনেই বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। কিন্তু রাজার স্ত্রী ও পুত্র ভারতেই থেকে যান এবং তাঁরা বাজেয়াপ্তকরণের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। সুপ্রিম কোর্ট মামলাকারীদের পক্ষেই রায় দেয়। আদালতের রায়ে বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি সরকারের হাতছাড়া হতে বসেছিল। তাই ২০১০ সালেই তৎকালীন ইউপিএ সরকার তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স জারি করে সম্পত্তি দখলে রাখার বন্দোবস্ত করে। কিন্তু অর্ডিন্যান্স অস্থায়ী বন্দোবস্ত। স্থায়ী সমাধানের জন্য শত্রু সম্পত্তি আইনের সংশোধনী সংসদে পাশ করানোর দরকার ছিল। ইউপিএ সরকার সংশোধনী পাশ করাতে পারেনি। লোকসভায় গরিষ্ঠতা থাকলেও, রাজ্যসভায় ইউপিএ সে সময় সংখ্যালঘু ছিল। বিজেপি রাজ্যসভায় সরকারকে সমর্থন দিতে রাজি হয়নি। ফলে বিল পাশ করানো যায়নি।

আরও পড়ুন: লোকসভায় মুখ খুলেও মোদী যেন জৌলুসহীন

এখন বিজেপির সরকারও একই সমস্যায় পড়েছে। লোকসভায় তাদের গরিষ্ঠতা রয়েছে। কিন্তু রাজ্যসভায় তারা সংখ্যালঘু। কংগ্রেস এখন বিজেপিকে সমর্থন করতে রাজি হচ্ছে না। ফলে অর্ডিন্যান্সের মেয়াদ ফুরনোর আগেই নতুন করে অর্ডিন্যান্স জারি করতে হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সংসদে সংশোধনী পাশ না করিয়ে সরকার বার বার অর্ডিন্যান্স জারি করছে। ফলে একই অর্ডিন্যান্স পাঁচ বার জারি করতে হয়েছে। এই ঘটনাকে গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ বলে মনে করছেন না রাষ্ট্রপতি। তাই পঞ্চম বার অর্ডিন্যান্সে সই করার আগে রাষ্ট্রপতি এই পদ্ধতির সমালোচনা করেন। কিন্তু সরকার এখনও অসহায়। কংগ্রেসের সমর্থন না পেলে বিলটি রাজ্যসভায় পাশ করানো সরকারের পক্ষে এখনও সম্ভব নয়।

মঙ্গলবার সরকার পক্ষের সাংসদদের বৈঠকে অরুণ জেটলি, অনন্ত কুমার, রবিশঙ্কর প্রসাদরা এই বিষয়টিই ব্যাখ্যা করেন। কেন আবার অর্ডিন্যান্স জারির পথেই হাঁটতে হবে, সে কথা দলীয় সাংসদদের জেটলিরা বুঝিয়ে বলেন। বৈঠক শেষ করে জেটলি, কুমার এবং প্রসাদ যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন আডবাণী তাঁদের থামান। দেশের স্বার্থে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনায় বসা দরকার বলে প্রবীণ সাংসদ মত প্রকাশ করেন। প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী এও বলেন যে প্রয়োজন হলে তিনি নিজে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। শত্রু সম্পত্তি আইনের সংশোধনী রাজ্যসভায় পাশ করানোর জন্য তিনি কংগ্রেসের কাছ থেকে সমর্থন চাইতে পারেন বলে আডবাণী জানান। অরুণ জেটলিরা আডবাণীর বক্তব্য শুনে নেন। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে বিজেপি নেতৃত্ব কোনও উৎসাহ এখনও দেখাননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement