পরকীয়ার ‘বিচারে’ গ্রাম সালিশি 

পরকীয়া আর অপরাধ নয়—দেশের শীর্ষ আদালতের এই রায়ের ২৪ ঘণ্টা আগেই নয়াদিল্লির তিলক মার্গ (সুপ্রিম কোর্টের এটাই ঠিকানা) থেকে প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার দূরে, ত্রিপুরায় পরকীয়ার জেরে মৃত্যু হল দুই মহিলার।

Advertisement

বাপি রায়চৌধুরী

আগরতলা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

পরকীয়া আর অপরাধ নয়—দেশের শীর্ষ আদালতের এই রায়ের ২৪ ঘণ্টা আগেই নয়াদিল্লির তিলক মার্গ (সুপ্রিম কোর্টের এটাই ঠিকানা) থেকে প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার দূরে, ত্রিপুরায় পরকীয়ার জেরে মৃত্যু হল দুই মহিলার। একজন খুন হলেন। অন্যজন আত্মঘাতী। এবং আর এক মহিলা গ্রামবাসীদের সালিশির জেরে সর্বসমক্ষে লাঞ্ছিত হলেন। জুতোর মালা পরিয়ে মুখে চুনকালি মাখিয়ে তাঁকে বেঁধে রাখা হল গাছের সঙ্গে।

Advertisement

ঘটনা—১: দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমায় একটি পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর অশান্তি চলছিল। অশান্তির মূলে সেই পরকীয়া প্রেম থাকা বা না-থাকা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই মহিলার অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর স্বামী নাকি তা দেখে ফেলেন। মঙ্গলবার সারা রাত ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই নিয়ে ঝগড়া চলে। স্বামীর আবেদনে গতকাল গ্রামের সালিশি সভা বসে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যে ঠিক নয় তা অভিযুক্ত মহিলা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। সালিশি সভার মধ্যে তর্কবিতর্ক চলাকালীনই অভিযুক্ত মহিলা তাঁর দেড় বছরের সন্তানকে নিয়ে বাড়ি চলে যান। সন্তানকে বাইরে রেখে ঘরের মধ্যে গিয়ে তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন। খবর পেয়ে পুলিশ ওই গ্রামে যায়। কোনও গ্রেফতারের খবর নেই।

ঘটনা—২: গোমতী জেলার অমরপুর মহকুমার রাঙামাটি গ্রামে স্বামী-স্ত্রীর পরকীয়া বিবাদের জেরে এক মহিলাকে ‘চরিত্রহীন’ আখ্যা দিয়ে গ্রামবাসীরা তাকে মারধর করে, গলায় জুতোর মালা ঝুলিয়ে, মুখে চুনকালি মাখিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।

Advertisement

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গ্রামেরই বাসিন্দা সঞ্জীব দাসের সঙ্গে পড়শি ওই মহিলার সম্পর্ক ছিল। তার জেরে সংসারে অশান্তি চলছিল। এই অশান্তির জেরে স্ত্রী বুলু দাসকে প্রায়শই মারধর করত সঞ্জীব। গত মঙ্গলবার বুলু দাস একটি মহিলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দ্বারস্থ হন। সংগঠনের সদস্যরা তাঁর বাড়িতেও যান। সঞ্জীব বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে ফিরে এসে স্ত্রীকে বেধরক মারধর করে। প্রতিবেশীরা মারাত্মক ভাবে জখম বুলু দাসকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে উদয়পুর জেলা হাসপাতালে বুলু দাসের মৃত্যু হয়।

বুধবার গ্রামে খবর আসতেই ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা সঞ্জীব দাসের পড়শি ওই মহিলার উপরে চড়াও হয়। সবাই মিলে মহিলাকে রাস্তা দিয়ে টেনেহিঁচড়ে, মারধর করতে করতে নিয়ে আসে। তার গলায় জুতোর মালা পড়িয়ে মুখে চুনকালি মাখিয়ে একটি গাছে বেঁধে রাখে। অমরপুরের এসডিপিও শৌভিক দে জানান, পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। মহিলা তিন-চার জন গ্রামবাসীর নাম দিয়েই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আজ একজনকে গ্রেফতার করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement