গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সাগরদিঘির বহাল গ্রামে শুধুই হাহাকার। আপনজন হারানোর আর্তনাদ। অপেক্ষা, কখন আসবে মৃতদেহ।
এই শোকের আবহেই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বুধবার সকালে নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে যান বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। বহাল গ্রামে দাঁড়িয়েই কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সচিবের সঙ্গে। অধীরবাবু জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকই দেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে তাঁকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটি চিঠি পাঠিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন অধীর।
নিরীহ শ্রমিকদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজভবন থেকে বিবৃতি প্রকাশ করে রাজ্যপালের বক্তব্য, ‘‘এই কাপুরুষোচিত হামলার নিন্দা করা উচিত সবার। এরা মানবতার শত্রু, জাতির শত্রু।’’
পাঁচ জনের হত্যার খবর পাওয়ার পরেও সেখানে যোগাযোগ করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। কারণ মোবাইল কাজ করছে না বলে অভিযোগ তাঁদের। অধীরবাবু সেই বিষয়টিও স্বরাষ্ট্রসচিবকে জানিয়েছেন। একটি হেল্পলাইন খোলার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রসচিবকে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও তিনি কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘কাশ্মীরে বর্বরোচিত হত্যার ঘটনায় আমরা গভীর ভাবে শোকাহত। মুর্শিদাবাদের পাঁচ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। পরিবারের লোকজনের দুঃখ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এই মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে পরিবারগুলিকে সব রকম সাহায্য করা হবে।’
আরও পড়ুন: হত্যালীলা: কাশ্মীরে জঙ্গি গুলিতে হত ৫ বাঙালি শ্রমিক
মঙ্গলবারই কাশ্মীরের কুলগামে কাজ করত যাওয়া পাঁচ শ্রমিককে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। তাঁরা সবাই সাগরদিঘির বহালনগরের বাসিন্দা। কিন্তু মৃতদেহ কী ভাবে বাড়িতে আসবে, তা জানেন না পরিবারের সদস্যরা। অধীর চৌধুরী বহাল গ্রামে যাওয়ার পরে বিষয়টি তাঁকে জানান এলাকাবাসী। এর পরে এক মৃতের বাড়িতে দাঁড়িয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে ফোন করে সংবাদ মাধ্যমের সামনেই বিষয়টি জানান লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর। পরে তিনি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকই মৃতদেহগুলি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে তাঁকে ফোনে জানিয়েছেন সচিব।
নিহতদের পরিবারে যেমন হাহাকার আর আর্তনাদ, গ্রামের আরও অনেকেই প্রচণ্ড উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কারণ এই গ্রাম থেকে আরও ১০-১২ জন শ্রমিক ওই এলাকাতেই কাজ করতে গিয়েছিলেন। তাঁরাও নিহতদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। এই বিষয়টিও ফোনে স্বরাষ্ট্রসচিবকে জানান অধীর। তিনি ফোনে বলেন, ‘‘রুটিরুজির টানে আরও অনেকেই বহাল গ্রাম থেকে কাশ্মীরে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কারণ ফোন কাজ করছে না।’’ কিন্তু ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সম্ভবত ফোন কাজ না করার বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়নি। এর পর স্বরাষ্ট্রসচিব এবং অধীরের মধ্যে এ নিয়ে সামান্য বাদানুবাদও হয়। তার পর অধীর একটি হেল্পলাইন খোলার কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রসচিব তাতে রাজি হয়েছেন বলে পরে জানিয়েছেন অধীর।
পরে এই গোটা বিষয় নিয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটি চিঠি লেখেন। তাতে তিনি মূলত তিনটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, নিহত শ্রমিকদের দেহ মুর্শিদাবাদের বাড়িতে পৌঁছতে যাতে অযথা দেরি না হয়, তা দেখার জন্য বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে। ঘটনায় পাঁচ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি এক জন আহত হয়েছেন। তাঁর চিকিৎসায় যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেই বিষযটি উল্লেখ করেছেন চিঠিতে। এছাড়া মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাশ্মীরের নানা জায়গায় কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের নিরাপতত্তা দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন অধীর। প্রধানমন্ত্রীকেও চিঠি পাঠিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অধীর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা অধীরের চিঠি।
আরও পডু়ন: উপত্যকা জুড়ে বিক্ষোভ, ডাল লেকে ঘুরছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা
অন্য দিকে জঙ্গি হানার পর থেকেই কুলগামের কাতারসুতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করে নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছেন নিরাপত্তা কর্মী-আধিকারিকরা। তবে এখনও পর্যন্ত জঙ্গিদের সম্পর্কে বিশেষ তথ্য জোগাড় করতে পারেননি বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। কোনও জঙ্গি সংগঠনও ঘটনার দায় নেয়নি। তবে জম্মু কাশ্মীরের জিজিপি দিলবাগ সিংহের দাবি, হামলার পিছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে।
ভুল সংশোধন: কাশ্মীরের কুলগামে জঙ্গি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬ হয়েছে বলে আমাদের ইন্টারনেট সংস্করণে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সর্বভারতীয় একাধিক সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছিল, আহত জহিরুদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আমরাও সেই ভুল করেছি। পরে জানা যায়, জহিরুদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং তিনি সুস্থ আছেন। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।