সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে অভিনেতা প্রকাশ রাজ-সহ দক্ষিণী চলচ্চিত্র পরিচালকেরা। ছবি: সংগৃহীত।
সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণের পরে মধ্য মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত না-করে প্রকাশ কারাটকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছিল সিপিএম। সেই কারাট প্রকাশের নেতৃত্বেই সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস চলছে মাদুরাইয়ে। আর সেই মঞ্চে শনিবার হাজির হলেন দক্ষিণী অভিনেতা প্রকাশ রাজ। সিপিএমের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই সখ্য রয়েছে প্রকাশ রাজের। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্মেলনে ২০১৮ সালে বাংলার ডানকুনিতেও এসেছিলেন তিনি। শুধু প্রকাশ রাজ নন, তামিল চিত্র নির্মাতা মারি সেলভারাজ, টিএস জ্ঞানাভেলও হাজির ছিলেন সিপিএম আহূত আলোচনাসভায়। তবে অভিনেতা, পরিচালকদের হাজির করলেও নেতার সঙ্কট সিপিএমে। ইয়েচুরির শূন্যস্থান পূরণ করার মতো কোনও বিকল্প যে দলে নেই, তা মেনে নিচ্ছেন সকলেই।
শুক্রবার সংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেছিলেন পলিটব্যুরোর সদস্য বিভি রাঘভুলু। সেই রিপোর্টের উপর শনিবার দিনভর আলোচনা করেছেন প্রতিনিধিরা। বাংলা থেকে হুগলির জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, মহিলা নেত্রী জাহানারা খান, ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কেরা আলোচনা করেছেন। সূত্রের খবর, প্রত্যেকেই বাংলায় সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। পাশাপাশি, সংগঠনের স্বাধীন শক্তির বিকাশের প্রশ্নে দলকে যে অনেক কসরত করতে হবে, তা-ও উঠে এসেছে বাংলার নেতানেত্রীদের কথায়।
রাঘভুলু আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়েছেন, গত তিন বছরে সারা দেশে সিপিএমের পার্টি সদস্যপদ বেড়েছে ৩৩ হাজার। ১০০ কোটির দেশে সেই সংখ্যা যে নামমাত্র তা-ও মানছেন সিপিএম নেতৃত্ব। রাঘভুলুর এ-ও দাবি, দলে যুব অংশের সদস্যের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর অংশের প্রতিনিধিত্বও। সিপিএমের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘ভোটে জেতা-হারা এখন ভাবনার মধ্যে না রেখে সাংগঠনিক কাঠামোকে টিকিয়ে রাখাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।’’
রবিবার শেষ হবে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস। তৈরি হবে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি, পলিটব্যুরো। সেই সঙ্গে প্রয়াত ইয়েচুরির জা়য়গায় কে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হবেন, তা-ও ঠিক হবে। পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এমএ বেবি, অশোক ধাওয়ালে-সহ বেশ কয়েক জনের নাম নিয়েই দলে আলোচনা রয়েছে। তবে অনেকে বলছেন, বিদায়ী পলিটব্যুরো কোনও নির্দিষ্ট নামে ঐকমত্য না হলে, পুরনো কাউকে এক মেয়াদের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হবে। সিপিএম নিয়ম করেছে, ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকতে পারবেন না। সেই নিয়মে বিদায়ী পলিটব্যুরোর সাত সদস্যের বাদ পড়ার কথা। সেই তালিকায় রয়েছেন, প্রকাশ, বৃন্দা কারাট, সুহাসিনী আলি, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, তামিলনাড়ুর নেতা জি রামকৃষ্ণন, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের সূর্যকান্ত মিশ্র। এঁদের মধ্যে বিজয়ন গত পার্টি কংগ্রেসের সময়েই বয়সের ঊর্ধ্বসীমা পার করে গিয়েছিলেন। কিন্তু কেরলের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁকে পলিটব্যুরোয় রেখে দেওয়া হয়েছিল। আবার বিজয়নকে এ বার কেরলে এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকারকে ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে রেখে ‘ব্যতিক্রম’ করে ফেলেছে সিপিএম। ফলে পার্টি কংগ্রেসে কী হবে সেই প্রশ্ন রয়েছে। নিয়ম কার্যকর হলে সিপিএমে এ বার প্রজন্ম বদলে যাবে। কিন্তু সেখানেই নেতার সঙ্কট প্রকট হচ্ছে দলের কাছে।