গ্রেফতারির পর দীপ সিধু। ছবি— পিটিআই
প্রজাতন্ত্র দিবসে লালকেল্লা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত দীপ সিধুকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হল। মঙ্গলবার সকালেই তাঁকে দিল্লির কাছে হরিয়ানার কার্নাল থেকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল। তার আগে পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন সিধু। ‘ফেরার’ দীপের অবস্থান বা গতিবিধি জানাতে ১ লক্ষ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল দিল্লি পুলিশ। হিংসার ঘটনার প্রায় দু’সপ্তাহ পর অবশেষে পুলিশি হেফাজতে পাঞ্জাবের এই অভিনেতা এবং সমাজকর্মী।
কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন দীপ। যদিও তাঁকে ‘বিজেপির চর’ আখ্যা দেন কৃষক আন্দোলনকারীদের একাংশ। প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্র্যাক্টর মিছিলের দিন বিক্ষোভকারীদের একটি দল পৌঁছে যায় লালকেল্লায়। সেখানে ভাঙচুরের পাশাপাশি পতাকাও ওড়ানো হয়। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন দীপ। তাঁর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদী কৃষকদের খেপিয়ে তোলার অভিযোগ উঠেছিল। পরে সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিয়ো আপলোড করে আত্মপক্ষ সমর্থনের পাশাপাশি দায় এড়ানোর চেষ্টাও করেছিলেন। প্রজাতন্ত্র দিবসে লালকেল্লায় তাণ্ডবের গোটা ঘটনায় দীপের ষড়যন্ত্রের ছাপ দেখছেন আন্দোলনরত কৃষক ইউনিয়নের নেতা তথা নাগরিক সমাজের একাংশ। কিন্তু কে এই দীপ সিধু?
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পঞ্জাবের মুখ্তসর জেলায় ১৯৮৪ সালে জন্ম সিধুর। আইন নিয়ে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য তা-ই পেশা করেছিলেন সিধু। এর পর মডেলিংয়ের দিকে ঝোঁকেন। ‘কিংফিশার মডেল হান্ট’ প্রতিযোগিতা জিতে অভিনয় জগতে পা রাখেন ২০১৫ সালে। সে বছর ‘রামতা যোগী’ নামে একটি পঞ্জাবি ফিল্মে আত্মপ্রকাশ করেন সিধু। তবে ফিল্মি পর্দায় সাফল্য আসে তার বছর তিনেক পর। ২০১৮-তে মুক্তি পায় ‘জোড়া ‘দশ নম্বরিয়া’। ওই পঞ্জাবি ফিল্মে গ্যাংস্টারের চেহারায় সিধুকে দেখা গিয়েছিল মুখ্য ভূমিকায়। এর পর খান তিনেক ফিল্মেও অভিনয় করেছেন তিনি। তবে ২০১৯ সাল থেকে সিধুকে রাজনীতির আঙিনায়ও দেখা যেতে শুরু করে।
লালকেল্লার ওই ঘটনার পর থেকে থেকে সমাজ মাধ্যমে সিধুর একের পর এক ছবি এবং পোস্ট ঘুরতে থাকে। তারই একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী তথা অভিনেতা সানি দেওলের প্রচারসঙ্গী হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিধু। গুরুদাসপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন সানি। অন্য একটি টুইটে সানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশেও সিধু রয়েছেন। ইউটিউবার ধ্রুব রাঠী সেই ছবিটি পোস্ট করেছেন। একটি ছবিতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রয়েছেন সিধুর পাশে। এই দু’টি ছবিই টুইট করেছেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণও।
বিজেপি-র হেভিওয়েটদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসার মাঝেই গত বছর কৃষক আন্দোলনেও শামিল হন সিধু। ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় শম্ভু এলাকায় তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন বহু সমাজকর্মী-আন্দোলনকারী তথা শিল্পী। ওই বিক্ষোভে কৃষকদের সঙ্গে ধর্নায় বসেন সিধুও।