ছবি পিটিআই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘বন্দুকধারী’-দের সঙ্গে ‘কলমধারী নকশালবাদ’-কেও পরাজিত করার ডাক দেওয়ার পরেই দিল্লিতে সমাজকর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করলেন, এ বার সরকারের সমালোচনা করলে তাঁদেরও ‘কলমধারী মাওবাদী’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হবে।
দিল্লির কাছেই হরিয়ানার সুরজকুণ্ডে কেন্দ্র, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে আজ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব ধরনের নকশালবাদকেই পরাজিত করতে হবে। বন্দুক হাতে নিয়ে ‘নকশালবাদ’-ও রয়েছে। কলম হাতে নিয়ে ‘নকশালবাদ’-ও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তৃতার পরেই দিল্লির গান্ধী পিস ফাউন্ডেশনে আইনজীবী, অধ্যাপক, সমাজকর্মীরা অভিযোগ তোলেন, মোদী সরকার তাঁর সমালোচকদের এত দিন ‘শহুরে নকশাল’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। গুজরাতের ভোট এগিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ‘কলমধারী নকশাল’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার রাস্তা খুলে দিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন কলমধারী নকশালবাদের কথা বলছেন, তখন তাঁর উচিত এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় পড়ে দেখা। সুপ্রিম কোর্ট একের পর এক রায়ে কলমের অপ্রতিরোধ্য অধিকারের কথা বলেছে।’’ কলিনের অভিযোগ, আসলে সরকার বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইছে। যাতে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করা যায়।
সম্প্রতি মাওবাদী সন্দেহে ধৃত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক জি এন সাইবাবাকে বম্বে হাই কোর্ট জেল থেকে মুক্তির নির্দেশ দেয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় খারিজ করে দেয়। পুরোপুরি হুইলচেয়ার বন্দি সাইবাবাকে জেলে না পাঠিয়ে বাড়িতেই গৃহবন্দি রাখার আর্জি খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম আর শাহ বলেছিলেন, ‘‘বিপজ্জনক হচ্ছে মস্তিষ্ক। মাওবাদীদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কই আসল।’’ সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধেই আজ আইনজীবী,অধ্যাপক, সমাজকর্মীরা সম্মেলনের ডাক দিয়েছিলেন।
কলিন বলেন, সরকারের সমালোচকদের ক্ষেত্রেও ওই মস্তিষ্ক, কণ্ঠ আর কলমই আসল। সরকার তার কণ্ঠরোধ করতে চাইছে। এনআরসি-সিএএ-র বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের দিল্লির হিংসায় উস্কানির
অভিযোগে বিনা প্রমাণে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপূর্বানন্দ বলেন, ‘‘দিল্লিতে কারা হিংসাত্মক কার্যকলাপ করেছিল,তা র তদন্ত হয়নি। ভীমা কোরেগাঁওয়ের অনুষ্ঠানের পরে কারা হিংসার ঘটনা ঘটিয়েছিল, তারও তদন্ত হয়নি। ভীমা কোরেগাঁওয়ের অনুষ্ঠানে যে সব সমাজকর্মী ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাঁদের জেলে পোরা হয়েছে।’’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে অপূর্বানন্দের স্পষ্ট প্রশ্ন, কারা নকশালবাদী, তা কী ভাবে নির্ধারণ করা হবে?
মেধা পাটকর কি নকশালবাদী? গিরিশ কারনাড কি নকশালবাদী ছিলেন? নকশালবাদী হওয়াই বা কী ভাবে অপরাধ হয়? অপূর্বানন্দ আরও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাবে বার বার শহুরে নকশালের কথা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে, সরকারের সমালোচকদের গ্রেফতার করা হতে পারে। যাঁরা সরকারের সমালোচক, তাঁরা জনগণের কণ্ঠ। তাঁদের কণ্ঠরোধ করার অর্থ জনগণের কণ্ঠরোধ করা। স্বাধীন ভাবে সরকারের সমালোচনা করার অধিকার থাকা উচিত। সমালোচনা করার পরেও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার থাকা দরকার। কেউ বাসে বা মেট্রোয় চেপে রোজ অফিসে যাচ্ছেন মানেই তিনি স্বাধীন নন।’’