দু’বছরের মধ্যেই লোকসভা ভোট। এক দিকে গোরক্ষক বাহিনীর তাণ্ডবে দলিতেরা মোদী সরকারের উপরে ক্ষিপ্ত। আবার সঙ্ঘের নেতারা বার বার সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তফসিলি জাতি-উপজাতির মধ্যেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভোটব্যাঙ্ক জমাট করতে আগামী বছরের বাজেটে বড় মাপের ঘোষণা করার পরিকল্পনা নিচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। যেখানে তফসিলি জাতি-উপজাতির উন্নয়নে নতুন ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ ঘোষণা হবে। এই খাতে অর্থ বরাদ্দও বিপুল পরিমাণ বাড়ানো হবে। বস্তুত ২০১৯-র লোকসভা ভোটের আগে ২০১৮-র বাজেটই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চান মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। নীতি আয়োগ এই নতুন প্রকল্পের নীল নকশা তৈরি করছে।
প্রশ্ন উঠেছে, পুরনো প্রকল্পই কি ফের নতুন মোড়কে সামনে আনা হবে?
কারণ বাজেটে ইতিমধ্যেই তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের পৃথক ‘সাব-প্ল্যান’-এর ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে প্রতি বছর অর্থ বরাদ্দও করা হয়। তা হলে নতুন কী হচ্ছে? নির্মল ভারত অভিযানের নাম পাল্টে স্বচ্ছ ভারত বা গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর জন্য রাজীব গাঁধীর নামের প্রকল্প পাল্টে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামে ঘটা করে চালু করার অভিযোগ আগেও উঠেছে। এ বার কি দলিত-আদিবাসীদের ক্ষেত্রেও সেটা-ই হতে চলেছে?
সরকারি সূত্রের অবশ্য দাবি, এসসি-এসটি সাব-প্ল্যান এখন রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার উপকার যাতে নিচুতলায় পৌঁছয়, সেই জন্যই নতুন দিশা খোঁজা হচ্ছে। নীতি আয়োগের প্রিন্সিপাল উপদেষ্টা রতন ওয়াটাল নতুন প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করেছেন। প্রকল্পের খসড়া সব মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রকগুলি যাতে নিজেদের বাজেট প্রস্তাব তৈরির সময় এই রূপরেখা মেনেই তফসিলি জাতি-উপজাতির জন্য অর্থ বরাদ্দ করে, তার সুপারিশও করেছে নীতি আয়োগ।
এই খাতে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বরাদ্দও করা হবে। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল এসসি-এসটি উন্নয়নে। আগামী বাজেটে তা বেড়ে দেড় লক্ষ কোটি টাকা হতে পারে। পেট্রোলিয়াম, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পরিবেশের মতো বেশ কিছু মন্ত্রক এখন আলাদা ভাবে এসসি-এসটি-দের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে না। নীতি আয়োগের সুপারিশ, এই মন্ত্রকগুলিও বাজেটের ১০ থেকে ১২ শতাংশ অর্থ এমন ভাবে ব্যয় করুক, যাতে তার ফায়দা তফসিলি জাতি-উপজাতি গোষ্ঠীভুক্ত আদিবাসী-দলিতদের কাছে পৌঁছয়। বিশেষ করে দলিত ও আদিবাসীদের কর্মসংস্থানের জন্য, তারা যাতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ পেতে পারে তার জন্য নতুন তৈরি স্কিল ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রক থেকেও এই খাতে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দর সুপারিশ করেছে নীতি আয়োগ।
আয়োগ কর্তাদের যুক্তি, শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না। অর্থ যাতে সঠিক ভাবে খরচ হয়, সেটাও দেখা দরকার। তারও ব্যবস্থা থাকবে নতুন ‘অ্যাকশন প্ল্যান’-এ।