চার বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারগুলিকে অ্যাসিড বিক্রি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তাতে অ্যাসিড হামলা বন্ধ হয়নি। ভারতে অ্যাসিড হামলার ঘটনা এখনও পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এ বার আক্রান্তেরা নিজেরা আত্মপ্রকাশ করছেন ফেসবুকে। নিজেদের কাহিনি নিজেরা লিখছেন। আড়াল সরিয়ে পৃথিবীর মুখোমুখি হচ্ছেন। মুখ পুড়লেও ওঁদের স্বপ্নগুলো পোড়েনি।
কল্পনা ঘোরায়াত। উত্তর ভারতের মেয়ে। বিউটিশিয়ান হিসেবে কদর ছিল। ক্রমশ কাজ বাড়ছিল। সঙ্গে বাড়ছিল রোজগারও। স্বনির্ভর হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন। আর সেই পথটাই বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল স্বামী। অ্যাসিড ছুড়ে কল্পনার গোটা মুখটাই বিকৃত করে দেয় সে। ৪০টি অস্ত্রোপচারের পরেও তা মেরামত করা যায়নি। এখনও কাজে যোগ দিতে পারেননি কল্পনা।
উত্তরপ্রদেশের সায়রা বানু। সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে নিজের দিদি, জামাইবাবু ও দিদির ছেলে মিলে অ্যাসিড ছুড়েছিল। সায়রার মুখ, চোখ ও হাতের ২১ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। সাতটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। আরও দু’টি বাকি। সায়রার সঙ্গে আক্রান্ত হয়েছিলেন আরও দুই বোন ও এক বোনের এক বছরের শিশু। দোষীদের ১০ বছর জেল হয়েছিল। এখন অবশ্য জামিনে মুক্ত।
পশ্চিমবঙ্গের মাবিয়া মণ্ডল। চার বছর আগে অ্যাসিড আক্রান্তের তালিকায় নাম উঠেছে। স্বামীর ছোড়া অ্যাসিডে মুখের ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। অন্ধ হয়ে গিয়েছেন মাবিয়া। সাংসারিক অশান্তি লেগেই থাকত। একরত্তি মেয়েকে এই পরিবেশ থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই বাপের বাড়িতে চলে এসেছিলেন। একদিন মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায় স্বামী। পুলিশ খুঁজে এনে দেয়। আত্মীয়-পরিজন ও প্রতিবেশীরা মিলে মিটমাট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ঘুমন্ত মাবিয়াকে অ্যাসিড ছুড়ে এখনও ফেরার স্বামী। ২১টি অস্ত্রোপচারের পরেও মাবিয়া ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে।
কল্পনা, মাবিয়া ও সায়রা— তিন জনের দুঃখের কাহিনি প্রায় এক সূত্রে গাঁথা। তিন জনেই অত্যন্ত কাছের মানুষের হাতে আক্রান্ত। কখনও সম্পত্তির লোভে, কখনও ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে অ্যাসিডকেই হাতিয়ার করেছে একান্ত আপনজন।
মনোবিদদের মতে, চূড়ান্ত আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন মানুষ না হলে এত কঠিন আঘাত হানা যায় না। মনোচিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম জানান, অ্যাসিড আক্রমণ পরিকল্পনা ছাড়া হয় না। আক্রান্তের বিকৃত মুখে ফুটে ওঠে আক্রমণকারীর মনের বিকৃতি।
(চলবে)