অভিযুক্ত হলে ইস্তফা মন্ত্রিত্বে, জয়রাজনই অস্ত্র বামের

স্বজনপোষণে নাম জড়ানোয় গত বছর অক্টোবরে পদত্যাগ করতে হয়েছিল কেরলের শিল্পমন্ত্রী ই পি জয়রাজনকে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়রাজন ছিলেন পিনারাই বিজয়নের মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় ব্যক্তি।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৮
Share:

অভিযুক্ত হওয়ায় পদত্যাগ। আদালতে ছাড় পাওয়ার পরে আবার মন্ত্রিত্বে ফিরিয়ে নেওয়ার রাস্তা খোলা। কেরলে বাম সরকার যদি এই উদাহরণ রাখতে পারে, বাংলায় তৃণমূলের সরকার কেন পারবে না— প্রশ্ন তুলছে সিপিএম।

Advertisement

স্বজনপোষণে নাম জড়ানোয় গত বছর অক্টোবরে পদত্যাগ করতে হয়েছিল কেরলের শিল্পমন্ত্রী ই পি জয়রাজনকে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়রাজন ছিলেন পিনারাই বিজয়নের মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় ব্যক্তি। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বছরখানেকের মাথায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর খারিজ করে দিয়েছে কেরল হাইকোর্ট। ভিজিল্যান্স দফতর আদালতেই হলফনামা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, জয়রাজন ‘বেআইনি’ কোনও কাজ করেননি এবং মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর ওই সিদ্ধান্তে কারও লাভবান হওয়ারও কোনও প্রমাণ নেই। আদালত থেকে ‘ক্লিন চিট’ পাওয়ার পরেই শুক্রবার তিরুঅনন্তপুরমে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে জয়রাজনকে ফের মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠেছে। পরিবহণমন্ত্রী টমাস চান্ডিকে নিয়ে চলতি বিতর্ক মেটার আগে জয়রাজনকে মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে অবশ্য কেরল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি।

কেরলের এই দৃষ্টান্ত তুলে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বিঁধছেন এ রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে। তাঁর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কেউ কোনও অভিযোগই নেয় না! ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে বলেন, আগে জানলে টিকিট দিতাম না। মুখ্যমন্ত্রীর জানার আগে অভিযুক্তদের মধ্যে যিনি মেয়র ছিলেন, জানার পরে তিনি মেয়রের পাশাপাশি মন্ত্রীও হয়ে যান!’’ তৃণমূলের তরফে কেউ অবশ্য এ নিয়ে মুখ খোলেননি।

Advertisement

আরও পড়ুন: ধীরে ঝাড়খণ্ডে সরছে ঘূর্ণাবর্ত

নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে শিল্পমন্ত্রী জয়রাজন তাঁর দুই নিকটাত্মীয়কে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় পদ পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই দুই আত্মীয়ের মধ্যে এক জন আবার সিপিএমের সাংসদ পি কে শ্রীমতির ছেলে। বিতর্কের জেরে দু’জনের কেউই অবশ্য পদে যোগ দেননি। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির হস্তক্ষেপে দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে শেষমেশ মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন বিজয়ন-ঘনিষ্ঠ জয়রাজন। হাওয়ালা কেলেঙ্কারিতে এস কে জৈনের ডায়েরিতে নাম থাকায় নৈতিক দায় নিয়ে অতীতে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা আ়ডবাণী।

অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে দু’বছর পরে ফিরে আসেন লোকসভায়। জয়রাজন-কাণ্ডেও একই নৈতিকতার নজিরের কথা বলছে সিপিএম।

ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে নিজের লোক বসানোর পরেও কেন জয়রাজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এই প্রশ্ন তুলে এফআইআর হয়েছিল কোচিতে। এফআইআর খারিজ করার দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জয়রাজন। ভিজিল্যান্স রিপোর্ট দেখার পরে আদালত বরং প্রশ্ন তুলেছে, প্রশাসন ওই এফআইআর গ্রহণই বা করল কেন? আদালতে গিয়ে নিষ্কৃতি পাওয়ার পরে জয়রাজন বলেছেন, ‘‘গোড়া থেকেই বলে এসেছিলাম, আমি কোনও অন্যায়ে জড়িত নই। তবু নৈতিকতার স্বার্থে ইস্তফা দিয়েছিলাম।

এখন সব পরিষ্কার হয়ে গেল।’’ মন্ত্রিত্ব ফিরে পাওয়ার প্রশ্নে জয়রাজনের জবাব, এই ব্যাপারে দলই যা ঠিক করার, করবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement