গোবলয়ের তিন রাজ্যে সমীক্ষায় বিজেপির খারাপ ফলের ইঙ্গিত।
অচ্ছে দিনের স্বপ্ন দূর অস্ত! বেড়েই চলেছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। টাকা তলানিতে। শেয়ার বাজার ধুঁকছে। এ সবের সঙ্গেই কর্মসংস্থান, কালো টাকা ফেরানোর ফাঁপা প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিরোধীদের তোপ-কটাক্ষ ছিলই। লোকসভা ভোটের মুখে এবার আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিল এবিপি নিউজের সমীক্ষা। ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যে বিজেপির খারাপ ফলের ইঙ্গিত। এই সমীক্ষা থেকেই লোকসভা ভোটেও মোদী-অমিত শাহ জুটির ভোটভাগ্যে অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। গেরুয়া শিবিরে অবশ্য একটাই স্বস্তি, সমীক্ষা হওয়া ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া জোরদার নয়।
শনিবারই গো-বলয়ের তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় ও রাজস্থান, দক্ষিণের তেলঙ্গানা এবং উত্তর-পূর্বের মিজোরামে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। বিধানসভা আর লোকসভার ভোটের অঙ্ক আলাদা হলেও এই পাঁচ রাজ্যের ভোটের প্রভাব লোকসভাতেও পড়বে বলেই মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা। ফলে সেই দিক থেকে ভোট পূর্ববর্তী এবিপি নিউজের এই পাঁচ রাজ্যের সমীক্ষা লোকসভা ভোটের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। আর সেখানেই গেরুয়া শিবিরে উদ্বেগ বাড়ছে। তুলনায় স্বস্তিতে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
এবিপি আনন্দের সমীক্ষায় ইঙ্গিত, গো-বলয়ের তিন রাজ্যই হাতছাড়া হতে চলেছে বিজেপির। ২০১৩ সালের বিধানসভা ভোটে রাজস্থানে ২০০ আসনের মধ্যে ১৬৩টি জিতে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। সমীক্ষীয় ইঙ্গিত, ১৪২ আসন পেয়ে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে গদিচ্যুত করতে চলেছে কংগ্রেস। বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে ৫৬ আসন। ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় ১২২ আসন নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে সরকার গড়তে পারে কংগ্রেস। বিজেপি থামতে পারে ১০৮-এ। গতবার যেখানে বিজেপি পেয়েছিল ১৬৫ আসন। এবার পালাবদলের ইঙ্গিত। ৯০ আসনের ছত্তীসগঢ়ে কিছুটা হাড্ডাহাড্ডির ইঙ্গিত থাকলেও কংগ্রেসের সরকার গড়ার ইঙ্গিত সেখানেও। কংগ্রেস পেতে পারে ৪৭, বিজেপি ৪০।
আরও পড়ুন: বর্ষশেষে পরীক্ষায় মোদী-শাহ, ৫ রাজ্যের ভোট ঘোষণা
ভোট ভাগাভাগির হিসেবে রাজস্থানে কংগ্রেস পেতে পারে ৪৯.৯%-বিজেপি ৩৪.৩%, মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস ৪২.২%-বিজেপি ৪১.৫%, ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস ৩৮.৯%-বিজেপি ৩৮.৬% ভোট। তিন রাজ্যেই সমীক্ষায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছিল কর্মসংস্থানের ইস্যু। সেখানে তিন রাজ্যেই হাল খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। রাজস্থানে ১৭ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ১৮ শতাংশ, ছত্তীসগঢ়ে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৬.৫ শতাংশ। স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে কর্মসংস্থান নিয়ে রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও ক্ষোভের বহিপ্রকাশ উঠে এসেছে সমীক্ষায়।
আরও পডু়ন: ঘোষণার সময় পিছিয়ে গুরুতর প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন
এ কথা ঠিক যে, সমীক্ষার ইঙ্গিত সব সময় মেলে না। তার উপর বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের ভোটের অঙ্কও এক রকম নয়। তবু ভোটারদের মন বোঝার ক্ষেত্রে সমীক্ষা সব সময়ই অন্যতম বড় হাতিয়ার ভোট বিশেষজ্ঞদের। সে দিক থেকেও এবিপি নিউজের এই সমীক্ষায় আগামী লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ। উল্টোদিকে লোকসভায় কিছুটা হলেও অক্সিজেন পাবে এবং নতুন উদ্যমে কংগ্রেস ঝাঁপাতে পারবে বলেই মনে করছে এই অংশ।
তবে মোদী-অমিত শাহের স্বস্তির দিকও রয়েছে। সমীক্ষায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেখানে মুখ্যমন্ত্রী ও বিধায়কদের কাজকর্মে যেখানে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভোটাররা, সেখানে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে খুব বেশি ক্ষোভ-অসন্তোষ ধরা পড়েনি। এই তিন রাজ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ কেন্দ্রে বিজেপি সরকার বা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর পরিবর্তন চান না। জনপ্রিয়তার দিক থেকেও রাহুল গাঁধী বা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে মোদীই।