জলকামানের মুখে। দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে আপের প্রতিবাদ চলার সময়। ছবি: পিটিআই।
তরুণী খুনের ঘটনায় দিল্লির তরজা এ বার মোড় নিল বিক্ষোভ-আন্দোলনে। মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবালের দফতরে ডাক পড়ল পুলিশ কমিশনারের। খুনের তদন্ত এবং রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক সোমবার। তার আগে কেন্দ্রের সঙ্গে কাজিয়া জিইয়ে রেখেই আজ দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখাল আপ।
অভিযোগ, রাজধানী শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে নিধিরাম কেন্দ্রের পুলিশ। তাই আজ ফের দাবি উঠল— স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নয়, দিল্লি পুলিশকে দিল্লি সরকারের হাতেই তুলে দেওয়া হোক। ব্যাপক ধরপাকড়ের পাশাপাশি বিক্ষোভের সামাল দিতে জলকামানও চালাতে হয় পুলিশকে। যদিও হতাহতের খবর নেই।
বৃহস্পতিবার দিল্লির আনন্দপর্বত এলাকায় শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করায় বছর উনিশের এক ছাত্রীকে প্রকাশ্য রাস্তায় ৩৫ বার কুপিয়ে খুন করে দুই দুষ্কৃতী। মহিলা নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের চাপানউতোরের শুরুটা সেখান থেকেই। যার জের টেনে আজও মোদীকে নিশানায় রাখেন কেজরীবাল। কটাক্ষের সুরেই বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে জোড়হাত করে অনুরোধ করছি, দয়া করে দিল্লি পুলিশের ভার আমাদের দিন। আপনার মাথায় তো গোটা দেশ চালানোর ভার!’’ দিল্লি পুলিশ কমিশনার বি এস বাস্সির কাছে গত কালই ৪৮ ঘণ্টার সময় দিয়ে তদন্তের রিপোর্ট চেয়েছিলেন কেজরী। আজ ডেকে পাঠালেন খোদ নিজের দফতরে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-কমিশনারের বৈঠক সোমবার বিকেল চারটেয়।
রাজ্যবাসীর একটা বড় অংশের অবশ্য অভিযোগ, নারী নিরাপত্তায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের এই তরজা ঘিরেই দিল্লিতে নিগ্রহের ঘটনা বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত। পরোক্ষে এই তরজাকেই নিশানায় রেখে তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যেই কোথাও একটা গলদ রয়েছে। পরস্পরকে দোষারোপ করে কোনও লাভ নেই।’’ তবে দিল্লি পুলিশের কিছু কার্যকলাপ রাজ্যের এক্তিয়ারেই রাখা উচিত বলে সওয়াল করেন তিনি। পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে গিয়ে কেজরীবালের ভিন্ন সুর। তাঁর কথায়, ‘‘বলছি না যে, দিল্লি পুলিশ অদক্ষ। ওঁরা তো দিব্যি কাজ করছেন। কিন্তু কাজের পরিবেশটাই তো দিচ্ছে না কেন্দ্র। পুলিশই হতাশায় ভুগছে, শহরবাসীকে নিরাপত্তা দেবে কী করে?’’
সরাসরি এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া না দিলেও, বাস্সি জানিয়েছেন কালকের বৈঠকে তিনি থাকবেন। সমালোচনার মুখোমুখি হতেও রাজি তিনি। তাঁর বক্তব্য— ‘‘পুলিশের কাজ নিয়ে কোথাও একটা ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। বৈঠকে তা দূর হওয়া দরকার। কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে দিল্লি পুলিশ কাজ করছে, মুখ্যমন্ত্রীকে তা বোঝানো দরকার।’’
এ দিকে, কেজরীর কাজিয়া রুখতে ময়দানে নেমেছে বিজেপি-কংগ্রেসও। নিহত তরুণীর পরিবারের সঙ্গে আজ দেখা করেন দিল্লি বিজেপির সভাপতি সতীশ উপাধ্যায় এবং দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস প্রধান অজয় মাকেন। আজ ফের তরুণী খুনে ধৃত জয় প্রকাশ ও তার ভাই অজয় প্রকাশের ফাঁসি দাবি করেন নিহতের পরিবার। পরে সংবাদমাধ্যমকে মাকেন বলেন, ‘‘দিল্লি সরকার কোনও ভাবেই এই দায় এড়াতে পারে না।’’