প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের মুখে গ্রেফতার করা হয়েছে নেতাকে। স্বাভাবিক ভাবেই মন ভাল নেই আম আদমি পার্টি (আপ)-র। তাই এ বছর হোলির আনন্দে মাতবেন না অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলের কেউ। পাশাপাশি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারির প্রতিবাদে আগামী ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করল আপ। শুক্রবার আপের দিল্লির আহ্বায়ক গোপাল রাই এই ঘোষণা করেছেন। আবগারি ‘দুর্নীতি’তে ইডির হাতে কেজরীওয়ালের গ্রেফতারিকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয় দিল্লির তিন বারের মুখ্যমন্ত্রীকে। শুক্রবার তাঁকে রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে হাজির করানো হলে দীর্ঘ সওয়াল-জবাব চলে। শেষ পর্যন্ত আপ-প্রধানকে ছয় দিন ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ইডি আদালতে দাবি করেছে, অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইনের নির্দিষ্ট ধারা মেনেই গ্রেফতার করা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। আপ-প্রধানের জামিনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, অপরাধে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কেজরীওয়াল। কয়েক জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার জন্যই ওই আবগারি নীতি আপ প্রণয়ন করেছিল বলে দাবি করা হয়েছে। ইডির আরও দাবি, আবগারি ‘দুর্নীতি’র টাকা গোয়া এবং পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনে কাজে লাগিয়েছিল আপ। এমনকি, আবগারি মামলায় ‘সাউথ গ্রুপ’কে সুবিধা পাইয়ে দিতে টাকা চেয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। এই দাবির পক্ষে বয়ান আছে বলে আদালতে দাবি করে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডির পক্ষে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু সওয়াল করতে গিয়ে জানান, ‘আবগারি দুর্নীতির কিংপিন’ কেজরীওয়াল।
আদালতের নির্দেশের কিছু ক্ষণ আগে আপের তরফে সাংবাদিক বৈঠক হয়। সেখানে আহ্বায়ক রাইয়ের অভিযোগ, আপের বিধায়ক এবং কাউন্সিলরেরা কোনও ভাবেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আপের নেতা থেকে কর্মী, সকলকে আটকানো হচ্ছে। কেজরীওয়ালের গ্রেফতারিতে সারা দেশ দুঃখিত এবং ক্রুদ্ধ।’’ ওই আপ নেতা জানান, শনিবার সকাল ১০টায় আপের বিধায়ক থেকে কাউন্সিলর এবং ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিরা ‘গণতন্ত্র রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞা’ করবেন। এর পর আগামী ২৪ মার্চ থাকছে আপের ‘প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি। তিনি বলেন, ‘‘আগামী ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ হবে দিল্লির প্রতিটি বিধানসভা এলাকায়। ২৫ মার্চ হোলির দিন, আমরা কোনও অনুষ্ঠান বা কর্মসূচিতে অংশ নেব না। ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবন ঘেরাও করব।’’ তাঁর দাবি, ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা এক জোট হতেই ভয় পেয়েছে বিজেপি। তারই ফল কেজরীর গ্রেফতারি।
অন্য দিকে, কেজরীওয়ালের স্ত্রী সুনীতা কেজরীওয়াল স্বামীর গ্রেফতারিতে সরাসরি দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘‘আপনাদের (দিল্লির জনগণ) তিন বারের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে মোদীজি তাঁর ক্ষমতার দম্ভে গ্রেফতার করিয়েছেন। সবাইকে চূর্ণ করার চেষ্টা করছেন তিনি।’’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর স্বামীর গ্রেফতারি আসলে দিল্লির জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। তিনি লেখেন, ‘‘আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী সব সময় আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জেলের ভিতরে হোক বা বাইরে, নিজের জীবন তিনি দেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন। জনগণই সব এবং তাঁরা সব কিছু জানেন। জয় হিন্দ।’’