—ফাইল চিত্র।
কাঁধ চওড়া হলেই প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায় না, রাবণেরও কাঁধ চওড়া ছিল। ও সব দেখানোর ইচ্ছা থাকলে সিনেমা বা যাত্রা করাই ভাল। নোট বাতিল ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর দিকে বৃহস্পতিবার এ ভাবেই তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নোট বাতিলের মাসপূর্তির পর পরিস্থিতি কতটা ‘শোচনীয়’, তা বাখ্যা করতে এ দিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নোট বাতিলের পিছনে নরেন্দ্র মোদীর গোপন এজেন্ডা রয়েছে বলে এ দিন ফের অভিযোগ করেছেন তিনি। ‘‘নোট বাতিলে দেশের সাধারণ মানুষের কোনও লাভ হয়নি, লাভবান হয়েছেন শুধু নরেন্দ্র মোদী আর তাঁর সঙ্গীরা’’, মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিজেপির নামে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার সহ বিভিন্ন রাজ্যে সম্প্রতি জমি কেনা হয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন ফের অভিযোগ করেছেন। তাঁর তীব্র কটাক্ষ, ‘‘সব তো শুনি ফকির! তা ফকিরবাবুরা এত জমি কিনলেন কী ভাবে? এত টাকা কোথা থেকে এল? ফকিরবাবুদের পকেটে কী আছে?’’
নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত যে ভাবে নেওয়া হয়েছে, এ দিন তার তীব্র সমালোচনা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা করে তিনি বলেছেন, ‘‘কোনও অর্থনীতিবিদের কথা শোনেন না, বিশেষজ্ঞদের মতামত নেন না, কাউকে বিশ্বাস করেন না, নিজের ইচ্ছায় হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েই চলেছেন।’’ নোট বাতিলের জেরে দেশের অর্থনীতি ৩ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের অর্থনীতিতে অন্ধকারতম অধ্যায় এসেছে। মোদী সরকার একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছে।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গত ত্রৈমাসিকে জাতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৩ শতাংশ। এই ত্রৈমাসিকে তা ৭.১ শতাংশে নামছে। নোট বাতিলের ধাক্কায় ব্যবসায় যে মন্দা, তা পরের ত্রৈমাসিকে আরও ২ শতাংশ কমে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অর্থনীতির এই মন্দা এবং সাধারণ মানুষের দুর্দশার ছবি তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘এটা একটা ম্যান-মেড অর্থনৈতিক বিপর্যয়, এবং এর পিছনে গোপন উদ্দেশ্য রয়েছে, এক মাস পর এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি।’’
আরও পড়ুন: নোট নেই, ধন্দ বাড়াচ্ছে গোপনীয়তা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘আমার এখন কোনও কাজ নেই। উন্নয়নের কাজটা একটা অবিরাম প্রক্রিয়া, সে কাজগুলো সারা বছর চলে। কিন্তু কাল আমি সারা দিন বসে ছিলাম, কোনও কাজ ছিল না। সব কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যাঁদের দিয়ে কাজটা হবে, তাঁদের তো টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। কাজটা করবে কে?’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নোট বাতিলের ধাক্কায় বিভিন্ন সংস্থায় কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশে ৫ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তৃণমূলনেত্রীর আক্রমণ, ‘’১২ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটি টাকা জমা পড়ে গিয়েছে। সব তো সাধারণ করদাতাদেরই টাকা। নরেন্দ্র মোদী সবার টাকা লুঠ করে নিয়েছেন।’’ এই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারটাই বেলাইন হয়ে গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার কোনও নৈতিক অধিকার আর নরেন্দ্র মোদীর আর নেই। মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
আরও পড়ুন: ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি ব্যাঙ্ক কর্মীদের
চওড়া কাঁধ আর চওড়া ছাতির প্রসঙ্গ নিয়েও নরেন্দ্র মোদীকে এ দিন তীব্র কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কাঁধ চওড়া তো কী হয়েছে? রাবণেরও তো কাঁধ চও়ড়া ছিল। কাঁধ চওড়া হলেই প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায় নাকি? এ আবার কী কথা!’’ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আরও কটাক্ষ, ‘‘ভুল করলে ভুল শুধরে নিতে হয়। আর তিনি ভুল করছেন আর কাঁধ দেখাচ্ছেন, ছাতি দেখাচ্ছেন। ছাতি চওড়া হলেই যদি রাজনীতি করা যায়, তা হলে তো কুস্তিগিররাই সব রাজনীতিক হয়ে যেতেন!’’