ছবি: পিটিআই।
চতুর্থ দিনে আশার আলো দেখা গেল। শনিবার বিকেলের পড়ন্ত আলোয় শাহিন বাগের একটি অবরুদ্ধ রাস্তা খুলে গেল। খুলে দিলেন বিক্ষোভকারীরাই।
গত প্রায় ৭০ দিন ধরে নয়ডা থেকে দিল্লি হয়ে ফরিদাবাদ যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করে সিএএ-এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে। আশেপাশের অনেক রাস্তা পুলিশই লোহার ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিল। শনিবার বিকেলে শাহিন বাগের মানুষই তার একটি রাস্তা খুলে দেন। এর ফলে অন্তত জামিয়া থেকে নয়ডা যাওয়ার নয় নম্বর রাস্তা খুলে গেল। ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচলও শুরু হয়েছে। পুলিশ নতুন করে রাস্তা বন্ধ করেনি।
শাহিন বাগের মহিলারা আজ বার্তা দিয়েছেন, তাঁরা শাহিন বাগের মূল রাস্তার একটি দিক খুলে দিতে পারেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টকে শাহিন বাগের নিরাপত্তার জন্য নির্দেশ দিতে হবে। পুলিশকে ২৪ ঘণ্টা সম্পূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। সেই সঙ্গে বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা শাহিন বাগ সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি সিএএ-এনআরসি প্রত্যাহার করতে হবে।
আরও পড়ুন: সমগোত্রে বিয়ে করায় মেয়েকে খুন, খালে দেহ
শনিবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি শাহিন বাগ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘যখন শিশুদের ‘মোদীকে খুন করব’ বলে স্লোগান শেখানো হচ্ছে, তখন কী বলার আছে? লোকে যখন ‘ভারত তেরে টুকড়ে হোঙ্গে’ বলে, তখন কী বলার থাকে?’’ কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শাহিন বাগের মহিলাদের সদ্যোজাত শিশু কোলে ধর্নায় বসা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। শীতের জেরে এক শিশুর মৃত্যুকে ‘শকিং’ বলে আখ্যা দেন।
শাহিন বাগের দাবি
• সিএএ-এনআরসি প্রত্যাহার
• অবরুদ্ধ রাস্তার একটা দিক খুলে দিলে প্রতিবাদীদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত
• সুপ্রিম কোর্টকে শাহিন বাগের নিরাপত্তার নির্দেশ
• হামলা হলে দিল্লির পুলিশ কমিশনার, থানার আধিকারিকদের পদত্যাগ
• জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বা শাহিন বাগের ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার
• স্মৃতি ইরানির মতো মন্ত্রী বা নেতানেত্রীরা শাহিন বাগের নামে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে
সুপ্রিম কোর্ট যখন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করে শাহিন বাগের অবরোধ সরানোর চেষ্টা করছে, তখন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা কেন এ রকম মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে আজ শাহিন বাগই প্রশ্ন তুলেছে। মধ্যস্থতার চেষ্টায় শনিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারী সাধনা রামচন্দ্রন একাই মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। তাঁর কাছে ক্ষোভ উগরে দেন মহিলারা। সাধনা বলেন, ‘‘শাহিন বাগ কায়ম রহে। আমরা একেবারই শাহিন বাগের প্রতিবাদ হটিয়ে দেওয়ার কথা বলছি না। আমরা শুধু রাস্তায় অবরোধ নিয়ে কথা বলতে এসেছি।’’ শাহিন বাগের মহিলারা প্রশ্ন তোলেন, রাস্তা অবরোধ নিয়ে যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে। অথচ সিএএ-এনআরসি-র বিরুদ্ধে শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের কথা শোনা হচ্ছে না কেন? সাধনা বলেন, ‘‘আপনারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গিয়ে কথা বলতে চাইলে যেতে পারেন। সরকারের কাছে যেতে চাইলে যেতে পারেন। আমরা সরকারের কাছ থেকে আসিনি।’’
শুক্রবার পুলিশ নিজেই শাহিন বাগ সংলগ্ন একটি রাস্তা খুলে দিয়েছিল। পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শাহিন বাগের অভিযোগ ছিল, মানুষকে হয়রান করে ক্ষোভ উস্কে দিতে শাহিন বাগের অনেক বিকল্প রাস্তা পুলিশই বন্ধ করে রেখেছে। সাধনা বলেন, ‘‘ওদের এবার সুপ্রিম কোর্টের সামনে জবাব দিতে হবে।’’