প্রতীকী ছবি
করোনার ধাক্কায় স্কুলের দরজা বন্ধ প্রায় চার মাস। কার্যত ভুলতে বসার জোগাড় ক্লাসরুমের গল্প, কলেজ-ক্যান্টিনের আড্ডা। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের একাংশ যে প্রবল মানসিক চাপের শিকার, তা কবুল করছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন বলেই সমস্যার সমাধান খুঁজতে মঙ্গলবার ‘মনোদর্পণ’ প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী পড়ুয়াদের প্রশ্ন, “আমাদের আশঙ্কা-উদ্বেগ-দুশ্চিন্তার খবর যদি সরকারের ঘরে সত্যিই থাকে, তবে কেন অতিমারির এই কঠিন পরিস্থিতিতেও চূড়ান্ত বর্ষ ও সিমেস্টারের পরীক্ষার বোঝা ছাত্র-ছাত্রীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে তারা?”
প্রকল্পটির উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত ভিডিয়ো কনফারেন্সে শিক্ষাসচিব অনিতা করওয়াল বলেন, করোনার কারণে পড়াশোনার চৌহদ্দি এমন ভাবে বদলে গিয়েছে যে, তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যায় পড়ছে শিশু মন। দেশের প্রায় ১২ কোটি শিশু-পড়ুয়ার এক বড় অংশকে গ্রাস করছে একাকিত্ব। ঘিরে ধরছে বিষাদ। সারাক্ষণ ঘরবন্দি থেকে হাঁপিয়ে উঠছে উঁচু ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরাও। ঘরে-বাইরের বদলে যাওয়া পরিস্থিতির জন্য প্রবল মানসিক চাপ ঘিরে থাকছে তাদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) থেকে শুরু করে আইসিএমআর, এনসিআরবি— সকলের সমীক্ষা থেকেই স্পষ্ট যে, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য টোল খাচ্ছে। এমনকি বাড়ছে আত্মহত্যার চিন্তা।
এই অবস্থায় পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আরও অনেক বেশি যত্নশীল হওয়ার কথা বলেছেন নিশঙ্কও। আশ্বাস দিয়েছেন, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নেট-নির্ভর পড়াশোনার উপরে জোর দিতে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তের সব থেকে দরিদ্র পড়ুয়াও যেন তার পরিকাঠামো পায়, খামতি থাকবে না সেই চেষ্টায়।
কিন্তু সেই সূত্রেই এই অতিমারির সময়েও পরীক্ষার বোঝা ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পড়ুয়ারা। গোড়া থেকেই প্রতিবাদে মুখর এআইএসএ সভাপতি এন সাই বালাজি, এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষরা। আওয়াজ তুলেছে এনএসইউআই-সহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে খোলা চিঠি দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর দফতর, নিশঙ্ক এবং ইউজিসি কর্ণধারকে। এ দিনও মন্ত্রীর কথা শোনার পরে প্রতিবাদী পড়ুয়াদের প্রশ্ন, “অনলাইনে পড়াশোনার পরিকাঠামো যে এই মুহূর্তে সকলের নেই, তা মানছে মন্ত্রক। তা হলে কোন ভরসায় নেট-নির্ভর পরীক্ষার জেদ ধরে রয়েছে তারা?”