স্কুলের নাম ‘আপনা স্কুল’। প্রতীকী ছবি।
খোলা আকাশের নীচে, গাছের তলায় চলছে পাঠশালা। নানা বয়সের এক দল কচিকাঁচা পড়ুয়াকে হিন্দি, ইংরেজি, অঙ্ক বুঝিয়ে দিচ্ছেন যিনি, তিনি খাকি উর্দিধারী এক পুলিশকর্মী। পড়ুয়ার দল তাঁকে ‘উর্দিওয়ালে গুরুজি’ বলেই ডাকে। প্রায় এক বছর ধরে একক প্রচেষ্টায় পথশিশুদের নিয়ে এ ভাবেই পাঠশালা চালিয়ে যাচ্ছেন অযোধ্যা পুলিশের ডেপুটি ইনস্পেক্টর (ডিআইজি) রণজিৎ যাদব।
স্কুলের নাম ‘আপনা স্কুল’। প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে ন’টা পর্যন্ত থানায় যাওয়ার আগে পড়ুয়াদের ক্লাস নেন গুরুমশাই। তবে সকালের দিকে কোনও দিন থানায় বিশেষ দায়িত্ব থাকলে অবশ্যই সেটা প্রাধান্য পায়। রণজিৎ বলেন, ‘‘সে দিন স্কুল চালানোর দায়িত্ব পড়ে বয়সে একটু বড় পড়ুয়াদের উপরে। ওরা খুব যত্ন নিয়ে ছোটদের পড়া দেখিয়ে দেয়।’’
স্কুলের বয়স বেশি দিন নয়। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে চালু হয়েছে স্কুলটি। তবে ভাবনার বীজ পোঁতা হয়েছিল অনেক আগে। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর রণজিৎ ২০১৫ ব্যাচের সাব ইন্সপেক্টর। চাকরির শুরুর দিকে তাঁর কর্মস্থল ছিল অযোধ্যার নয়াঘাট থানা। সেখানে যাওয়া-আসার পথে প্রথম ওই শিশুরা তাঁর নজরে আসে। রণজিৎ জানান, ওরা মূলত ভিক্ষাজীবী পরিবারের। অযোধ্যার মঠ, মন্দির সংলগ্ন ঘিঞ্জি গলিতে, সরযূ নদীর ধারে বসে ওরা ভিক্ষা করত। কারও পরিবার আছে। কেউ কেউ অনাথ। পয়সা বা খাবারের জন্য ওরা ভিক্ষা করে বেড়াত। ওদের জন্য কিছু করার কথা তখনই মাথায় আসে পুলিশকর্মী রণজিতের। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, স্থানীয় খুরজা কুণ্ড এলাকায় ভিক্ষাজীবী পরিবারগুলির বাস। সেখানেই স্কুল খোলার কথা স্থির করেন রণজিৎ।
প্রথমে ওই এলাকায় গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন রণজিৎ। বাচ্চাদের তাঁর স্কুলে পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানান। শুরুর দিকে অনেকেই এ বিষয়ে উৎসাহ দেখাননি। তবে রাজি হয়েছিলেন।