Rahul Gandhi meets Abhishek Banerjee

বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ আলোচনার টেবিলে বসার আগে বৈঠকে রাহুল ও অভিষেক, কথা কী নিয়ে?

মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র সম্মেলন শুরুর ঠিক একদিন আগে কংগ্রেস নেতার সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের এই বৈঠক জাতীয় বিরোধী রাজনীতিতে ছোটখাটো বিস্ফোরণের সমতুল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও মুম্বই শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ০৬:১১
Share:

(বাঁ দিকে) রাহুল গান্ধী এবং (ডান দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ মুম্বইয়ে আলোচনার টেবিলে বসার আগেই বুধবার কাকভোরে ১০ জনপথে (সনিয়া গান্ধীর বাসভবন) রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে বসলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র সম্মেলন শুরুর ঠিক একদিন আগে কংগ্রেস নেতার সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের এই বৈঠক জাতীয় বিরোধী রাজনীতিতে ছোটখাটো বিস্ফোরণের সমতুল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কংগ্রেস এবং তৃণমূল— উভয় শিবির সূত্রেই দাবি, এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই শিবিরেরই মতের নির্যাস, দীর্ঘ রাজনৈতিক চড়াই-উতরাই পার হয়ে এ দিন এই মুখোমুখি বসা।

কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা ‘মুখ’ রাহুল এবং তৃণমূলের নতুন প্রজন্মের নেতা অভিষেক মোদী-বিরোধী রাজনীতির রণকৌশল নিয়ে আলোচনা করলেন দীর্ঘ সময়। কংগ্রেস সূত্রের খবর, আলোচনা হয়েছে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের সার্বিক রণকৌশল, পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক বোঝাপড়ার মতো বিষয়গুলি নিয়ে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, আগামী দু'দিন রাহুল এবং অভিষেক একই শহরে অর্থাৎ মুম্বইয়ে থাকবেন। থাকবেন একই সভাকক্ষে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আলাদা করে দিল্লিতে এই বৈঠকটি করে নেওয়া হল। তা-ও কাকভোরে।

Advertisement

এই বৈঠকের জন্যই অভিষেক আলাদা করে দিল্লিতে চলে গিয়েছিলেন মুম্বই যাওয়ার আগে। সরাসরি মমতার সঙ্গে মুম্বই যাননি। এর আগে বেঙ্গালুরুতে বিরোধী বৈঠকে মমতা ও রাহুলের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া দেখা গিয়েছিল। মমতা সাংবাদিক সম্মেলনের মঞ্চ থেকে রাহুলকে 'আমাদের সকলের প্রিয়' বলে সম্বোধন করেন। জোটের নামকরণ করেন দু’জনে একত্রে। তবে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মমতা-সনিয়া সমীকরণ ভাল হলেও মমতা-রাহুল এ রকম সখ্য ছিল না। এখন তা পরবর্তী প্রজন্মে চলে এল।

রাজনৈতিক শিবির মনে করিয়ে দিচ্ছে, ঠিক দু'বছর আগে এই অভিষেকই টানা ন'ঘণ্টা ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের পরে রাতে সংবাদমাধ্যমের সামনে অভিযোগ তুলেছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভয়ে কংগ্রেস ঘরে ঢুকে বসে রয়েছে। অন্য দিকে সাম্প্রতিক অতীতে রাহুল বিরোধী নেতাদের সঙ্গে দফায়-দফায় বৈঠক করেছেন ঠিকই, কিন্তু এতটা গুরুত্ব দিয়ে অন্য কোনও দলের ‘নাম্বার টু’-এর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করতে তাঁকে দেখা যায়নি।

আজ সকালেই কর্নাটকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়া নির্ধারিত ছিল রাহুলের। কংগ্রেস সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভোর সাড়ে ছ'টার সময়ে অভিষেক পৌঁছে যান রাহুলের সঙ্গে দেখা করতে। এক ঘণ্টা একান্তে কথা হয় দুই নেতার। তার পরেই রাহুল রওনা দেন বিমানবন্দরের উদ্দেশে। এর পরে রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সম্পর্ক কোন খাতে গড়ায়, ঔৎসুক্য রয়েছে তা নিয়েও।

তৃণমূল নেত্রী মমতার সঙ্গে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এবং সনিয়ার ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। কিন্তু বেঙ্গালুরু বৈঠকের আগে পর্যন্ত গত কয়েক বছরে রাহুলের সঙ্গে সেই সখ্য কিংবা সম্পর্কের উষ্ণতা কিন্তু আদৌ দেখা যায়নি তৃণমূল নেতৃত্বের। বরং কংগ্রেস সম্পর্কে জাতীয় স্তরে তৃণমূলের ‘অ্যালার্জি’ই ফুটে বেরিয়েছে। অন্য দিকে, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী-সহ বাংলা কংগ্রেস ব্রিগেড নিয়োগ দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যে তুলোধনা করেছে তৃণমূলকে।

চব্বিশের লোকসভা ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্তরে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সম্পর্কের রং প্রথম বদলাতে দেখা গেল রাহুলের সাংসদ পদ চলে যাওয়ার পরে। মমতা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার প্রতিবাদ করে টুইট করেছিলেন। তার পরে সংসদীয় অধিবেশনগুলিতে দেখা গিয়েছে ক্রমশ কাছাকাছি আসছে এই দুই বিরোধী দল। গান্ধীমূর্তির সামনে সমবেত ধর্নায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে মণিপুর নিয়ে স্লোগান দিয়েছেন অভিষেক। খড়্গের পাশের ওই জায়গা সাধারণত সংরক্ষিত থাকে রাহুলের জন্যই। সে দিন রাহুল সংসদে ছিলেন না। কিন্তু অতীতের যাবতীয় ‘অ্যালার্জি’ পাশে সরিয়ে ‘ইন্ডিয়া’কে সামনে রেখে খড়্গে ওই জায়গাটি দিয়েছিলেন তৃণমূলের নেতাকেই। অন্য দিকে, লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরীকে সাসপেন্ড করার পরে প্রতিবাদে গলা মিলিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদেরাও।

রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, যে ভাবে সম্প্রতি কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে জাতীয় স্তরে ঘনিষ্ঠতা দেখা যাচ্ছিল, তারই অনিবার্য পরিণতি রাহুল-অভিষেকের আজকের বৈঠক। তবে একই সঙ্গে যে প্রশ্নটি আজকের পরে আরও জোরালো হচ্ছে, তা হল পঞ্চায়েত নির্বাচনে রক্ত ঝরানো বাংলার কংগ্রেস কর্মীদের কাছে তৃণমূল বিরোধিতার প্রশ্নে বিশ্বাসযোগ্যতা এর পরে কতটা থাকবে? ‘বাংলায় কুস্তি, দিল্লিতে দোস্তি’-র প্রচলিত ব্যঙ্গকেই যে কাজে লাগাবে বিজেপি, তা প্রত্যাশিত।

গত কালই অধীর কলকাতায় কর্মীদের বলেন, ‘‘আপনাদের বলে যাই, বাংলায় এক দিকে তৃণমূল, অন্য দিকে বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।’’ কয়েক দিন আগে অধীর একটি সাক্ষাৎকারে সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ এবং রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ সমীকরণ নিয়ে কথা বলেছিলেন। সাক্ষাৎকারে বহরমপুরের সাংসদ বলেছিলেন, ‘‘পুকুর এবং নদীর মধ্যে ফারাক আছে। আমার কাছে বাংলা হল পুকুর। আর ভারত হল নদী।... আমি যা বলতে চাই, সেটাই বলি। পিছন থেকে কথা বলি না।”

এখন রাহুল-অভিষেকের এই বৈঠকের পরে রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অধীরেরহাতে কী রসদ জোগাবে কংগ্রেস হাইকমান্ড, এ বার সেটাইদেখার। আজকের বৈঠকের পরে লোকসভায় কংগ্রেসকে আসন ছাড়ার প্রশ্নে তৃণমূলও কী নীতি নেয়,সে বিষয়েও ঔৎসুক্য রয়েছে রাজনৈতিক শিবিরের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement