সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।
প্রশ্নটি ছিল, নিম্নলিখিত সমার্থক শব্দগুচ্ছগুলির মধ্যে কোনটি অশুদ্ধ? যে চারটি উত্তরের মধ্যে সঠিক বেছে নিতে হত, সেগুলি ছিল—
এ) অদম্য, তমোনাশ, উদধি, পূষণ বি) দিবাকর, বিবস্বান, বিভাবসু, তরণী সি) প্রভঞ্জন, মরুৎ, অনিল, সমীর ডি) হয়, বাজী, তুরগ, তুরঙ্গম।
২০১৪ সালের টেট-পরীক্ষায় এই প্রশ্ন ঘিরে আজ সুপ্রিম কোর্টে রীতিমতো চুলচেরা বিচার চলল। বিচারপতিদের মধ্যে একজন বাঙালি ছিলেন বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু। আইনজীবীদের মধ্যেও বাঙালির সংখ্যা কম ছিল না। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত, কুণাল চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে যোগ্য হয়েও চাকরি না পাওয়া প্রার্থীদের হয়ে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সবাই মিলেই কোন শব্দের কী অর্থ, তা নিয়ে রীতিমতো মাথা ঘামালেন।
টেট পরীক্ষায় এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর ‘এ’ হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ প্রথমে ঠিক করেছিল। কিন্তু পরে দেখা যায়, ‘বি’-ও সঠিক উত্তর। তার পরেই পরীক্ষার্থীদের এক নম্বর করে বাড়িয়ে দিয়ে অতিরিক্ত ২৭০ জনকে টেট-উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। সেখানেই দুর্নীতি হয় বলে অভিযোগ। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারা প্রাথমিক শিক্ষকরা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ জানতে চেয়েছিল, কোন সেই প্রশ্ন। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর পড়ে শোনান। কোনগুলি সমার্থক শব্দ, কোন শব্দের অর্থ অন্যদের থেকে ভিন্ন, তা নিয়ে বিচারপতি বসু নিজেই মাথা ঘামাতে শুরু করেন। জয়দীপ জানান, তিনি নিজেই অনেক শব্দ প্রথম বার শুনছেন। তিনি মন্তব্য করেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের খুব ভাল বাংলা জানতে হয়।
বিচারপতি বসু প্রশ্ন তোলেন, প্রশ্নে আসলে কী জানতে চাওয়া হচ্ছে? বিকাশ জানান, অশুদ্ধ বলতে জানতে চাওয়া হচ্ছে, কোনটি সঠিক নয়। বিচারপতি ধুলিয়া বাংলা না বুঝলেও মোদ্দা বিষয়টা বুঝে বলেন, সন্তানকে কে ভালবাসে, বাবা না মা, এমন অস্পষ্ট প্রশ্নের দরকার কী! শেষে বিচারপতিরা হাল ছেড়ে দিয়ে বলেন, এর সঙ্গে মামলার সম্পর্ক নেই। নেহাত কৌতূহলবশত জানতে তাঁরা প্রশ্নটা জানতে চেয়েছিলেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন আইনজীবীরাও।