ক’মাস আগে তৃতীয় বার অ্যাসিড হামলার পর হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে দেখে এসেছিলেন স্বয়ং যোগী আদিত্যনাথ। নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে এসেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। ২৪ ঘণ্টার প্রহরার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশকে। কিন্তু সেই সব কিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘চেনা’ দুষ্কৃতীদল আবার অ্যাসিড ছুড়ে পুড়িয়ে দিয়ে গেল সেই দলিত মহিলার মুখ। ন-বছর আগে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর থেকে, মামলা না তোলার ‘সাহস দেখিয়ে যাওয়ায়’ ফল হিসেবে, এই নিয়ে চার বার অ্যাসিড হামলা হল তাঁর উপর।
বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলা চাকরি করেন লখনউয়ের একটি কাফেতে। অ্যাসিড আক্রান্তরাই ওই কাফেটি চালান। মহিলা থাকেন আলিগঞ্জের একটি হস্টেলে। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো সারাক্ষণ তাঁর জন্য মোতায়েন থাকে সশস্ত্র প্রহরী। গতকাল, শনিবারও সেই প্রহরা ছিল। রাত আটটা থেকে ন’টার মধ্যে ওই মহিলা হোস্টেলের বাইরের হ্যান্ডপাম্প থেকে জল নিতে বেরিয়েছিলেন। ব্যাস্, ওই সময়টুকুই কাজে লাগিয়ে তাঁর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতী। তাঁর মুখের ডান দিক পুড়ে গিয়েছে। ভর্তি করানো হয়েছে লখনউয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে।
আরও পড়ুন: ঝাড়খণ্ডে মাংস ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার বিজেপি নেতা
জমি নিয়ে বিবাদের জেরে ২ সন্তানের মা ওই মহিলা ২০০৮ সালে গণধর্ষণের শিকার হন। ঘটনায় ২ জন গ্রেফতার হয়। তাদের বিচার চলছে। আক্রান্ত মহিলার স্বামী জানিয়েছেন, সেই ঘটনার পর থেকেই নানা ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছিল অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য। হুমকি দেওয়া হচ্ছিল মামলা না তুললে দেখে নেওয়ার। হুমকি যে শুধু ফাঁকা আওয়াজ ছিল না, তার প্রমাণ মেলে বছর তিনেকের মধ্যেই। ২০১১-য় তাঁর উপর প্রথমবার অ্যাসিড হামলা চলে। ২০১৩-য় ফের অ্যাসিড ছোঁড়া হয় তাঁর উপর। এর পর গত মার্চে তৃতীয়বার ওই মহিলার উপর অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটে। সে দিন লখনউয়ের কর্মস্থল থেকে রায়বেরিলিতে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রেনের মধ্যেই তাঁর উপর হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। তার পরই হাসপাতালে ওই মহিলাকে দেখতে গিয়েছিলেন সে সময় সদ্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়া আদিত্যনাথ। ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপত্তার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই অ্যাসিড হামলার ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।
কিন্তু এত কিছুর পরও আরও এক বার তাঁর মুখে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনায় আদিত্যনাথ সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে বিরোধীরা। প্রশ্ন তুলেছে উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নারী নিরাপত্তার হাল নিয়ে।অন্য দিকে লখনউ পুলিশের এডিজি অভয়কুমার প্রসাদ জানিয়েছেন, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। শীঘ্রই দোষীদের গ্রেফতার করা যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।