National News

ক্লাস ওয়ানের ছাত্রকে ছুরি দিয়ে কোপাল স্কুলেরই ‘দিদি’

লখনউয়ে একটি বেসরকারি স্কুলের ভিতরেই এমন ভয়ানককাণ্ড ঘটিয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী। ওই ছাত্রটি আপাতত হাসপাতালে ভর্তি। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ১৯:১৯
Share:

স্কুলের ভিতরেই প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াকে ছুরি দিয়ে কোপালো ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী। প্রতীকী ছবি।

স্কুল যাতে তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যায়, সে কারণে ছুরি দিয়ে প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রকে এলোপাথাড়ি কোপানো হল। লখনউয়ে একটি বেসরকারি স্কুলের ভিতরেই এমন ভয়ানককাণ্ড ঘটিয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী। ওই ছাত্রটি আপাতত হাসপাতালে ভর্তি। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাকে দেখতে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, বছর ছয়েকের হৃতিক শর্মা লখনউয়ের ব্রাইটল্যান্ড ইন্টার কলেজ স্কুলে প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া। মঙ্গলবার সকালে তাকে স্কুলের শৌচালয়ে ডেকে নিয়ে যায় এক ‘দিদি’। সেখানে ঢুকেই হৃতিককে মারধর করতে থাকে ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী। এর পর একটি ছোট ছুরি দিয়ে আক্রমণ করা হয় তাকে। একের পর এক কোপ বসিয়ে দেওয়া হয় ছোট্ট হৃতিকের শরীরে— বুকে, পেটে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে হৃতিক পুলিশকে জানিয়েছে, ওই ‘দিদি’ তাকে ডেকে প্রথমে বলে ‘দিদিমণি’ ডাকছেন। তার পর তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় তিন তলার শৌচাগারে। সেখানেই ওই কাণ্ড ঘটায় সে।

কিন্তু, এমন ভাবে মারার কারণ কী?

Advertisement

পুলিশের কাছে হৃতিক যা জানিয়েছে, তা অতি ভয়ঙ্কর। শুনে তদন্তকারীরাও চমকে গিয়েছেন। ছুরি দিয়ে ওই শিশুকে আঘাত করার সময় ছাত্রীটি বলছিল, ‘‘তোকে মারলে, তুই মারা গেলে স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যাবে।’’ কেন এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল ওই কিশোরীর মনে? পুলিশ কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলেন, ‘‘আমরা বড়রাই তো হিংসার পরিবেশ তৈরি করছি প্রতি নিয়ত। সেটাই কোনও ভাবে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যাচ্ছে। শিশুরা হয়তো মনে করছে, বড়রা যদি করতে পারে, তা হলে আমরা নই কেন! তাদের মনে তার প্রভাব পড়ছে।’’

আরও পড়ুন:

পুলিশ-দুষ্কৃতী গুলির লড়াইয়ের বলি আট বছরের শিশু

কুরুক্ষেত্রের খালে মিলল সেই তরুণের নগ্ন দেহ!

লখনউয়ের স্কুলে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা ফের একবার মনে করিয়ে দিল গুরুগ্রামের রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রদ্যুম্ন ঠাকুরের স্মৃতি। স্কুলের শৌচালয় থেকে গলা কাটা অবস্থায় ওই ছাত্রের দেহ মিলেছিল।খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই স্কুলেরই দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে।প্রদ্যুম্নকে বাঁচানো যায়নি। তবে, হৃতিককে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি। চিকিৎসক সন্দীপ তিওয়ারি জানিয়েছেন, হৃতিকেরবুকে এবং পাকস্থলীতে মারাত্মক জখম রয়েছে। ধারালো ছুরিদিয়ে তার শরীরে একাধিক বার আঘাত করা হয়েছে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

হৃতিককে শৌচালয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্কুলেরই এক শিক্ষক অমিত সিংহ চৌহান। তিনি জানিয়েছেন, স্কুলের তিনতলার ওই শৌচাগারের দু’টি অংশ। স্কুলের শিক্ষক এবং কর্মীদের জন্য একটা অংশ, অন্য অংশটি ব্যবহার করে পড়ুয়ারা। ঘটনার দিন শৌচালয়ের ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনে ভিতরে গিয়ে তিনি দেখেন, চারদিক রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তার মধ্যেই শুয়ে কাতরাচ্ছে হৃতিক। মুখে কাপড় গোঁজা। বুক এবং পেট থেকে গলগল করে রক্ত বার হচ্ছে।সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

খবর ছড়িয়ে পড়তেই হইচই শুরু হয়ে যায় গোটা স্কুলে। হৃতিকের বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়। খবর যায় পুলিশের কাছেও। লখনউ পুলিশের এক আধিকারিক নেপাল সিংহ জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছেওই স্কুলের প্রিন্সিপালকে। স্কুলের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে, শৌচাগার চত্বরে যে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না, তা-ও জানিয়েছে পুলিশ। গোটা ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে শিশুটির পরিবার।

কিন্তু বার বার স্কুলের ভিতরে কেন এমন ঘটনা ঘটছে? মোহিতবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘স্কুল বলতে আমরা যেমন বুঝি, এই শিশুদের কাছে হয়তো সেটা পাল্টে গিয়েছে। ওদের কাছে হয়তো এই সিস্টেমটাই যন্ত্রণাদায়ক। তাই এত হিংস্র হয়ে উঠছে ওরা। স্কুল সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা বদলের প্রয়োজন আছে কি না আমাদের তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement