ছবি ধরাবে জঙ্গি, শেখালেন শিল্পী

বিস্ফোরণের আগে শেষবার একটি থলি হাতে দেখা গিয়েছিল ওই যুবককে। কিংবা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে প্রকাশ্যে হত্যালীলা চালিয়ে উধাও হয়ে গেল সেই জঙ্গি। বা জঙ্গি ঘাঁটিতে অপহরণকারীদের নেতাকে দেখেছিলেন অপহৃত ব্যবসায়ী।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১৯
Share:

প্রশিক্ষণ শিবিরে দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র

বিস্ফোরণের আগে শেষবার একটি থলি হাতে দেখা গিয়েছিল ওই যুবককে। কিংবা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে প্রকাশ্যে হত্যালীলা চালিয়ে উধাও হয়ে গেল সেই জঙ্গি। বা জঙ্গি ঘাঁটিতে অপহরণকারীদের নেতাকে দেখেছিলেন অপহৃত ব্যবসায়ী। এদের কারও ছবি নেই পুলিশের খাতায়। অথচ মুহূর্তের সেই দেখার সূত্র ধরেই খুঁজে বের করতে হবে জঙ্গি বা দুষ্কৃতীদের।

Advertisement

এমন সব ক্ষেত্রে অসম পুলিশ বেশিরভাগ সময়ই শরণাপন্ন হয় হাওড়ার বালির দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ, অসম পুলিশের হাতে কোনও শিল্পী নেই যিনি বর্ণনা শুনেই এঁকে ফেলবেন জঙ্গির মুখ। এমন শিল্পী নেই উত্তর-পূর্বের অন্য কোনও রাজ্যেও। সে করণেই গদাপাণি পাঠকের অপহরণ ও হত্যা কিংবা গুয়াহাটি ধারাবাহিক বিস্ফোরণ, তলব করা হয় দেবাশিসবাবুকে।

সম্প্রতি কোকরাঝাড়ে এসে স্কেচ আঁকার পাশাপাশি পুলিশ, এসএসবি ও সেনাবাহিনীর জওয়ানদের ‘ক্লাস’ও নিলেন দেবাশিসবাবু। রাইফেল বাইরে রেখে, বাধ্য ছাত্রের মতোই জওয়ানরা জানার চেষ্টা করলেন অপরাধীর চেহারা পড়ার ‘অ-আ-ক-খ’।

Advertisement

কোকরাঝাড় পুলিশ জানায়, সম্প্রতি আরএসএসের অন্যতম প্রধান প্রচারক প্রদীপণ দক্ষিণ ভারত থেকে কোকরাঝাড়ের দলীয় সভায় এসেছিলেন। ফেরার সময় যে গাড়িতে তাঁর ওঠার কথা, সেখানে অন্য এক যুবক উঠেছিলেন। প্রদীপণ ভেবে ওই যুবককে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তার ডান হাতে গুলি লাগে। ভুল ব্যক্তিকে গুলি করা হয়েছে বুঝে পালায় সশস্ত্র দুই হামলাকারী। তাদের ছবি আঁকানোর জন্যই এ বার দেবাশিসবাবুকে ডাক পড়েছে।

সেকানে কাজ শেষ হতেই চিরাংয়ের এসপি শঙ্কর রাইমেধি দেবাশিসবাবুকে চিরাংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যান। সেখানে প্রথমে পুলিশের আইটি সেলকে স্কেচ আঁকার সফ্‌টঅয়্যার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন তিনি। শেখান বিদেশি সফ্‌টঅয়্যার ব্যবহার করে অভিযুক্তের মুখ ফুটিয়ে তোলার খুঁটিনাটি।

এর পর সীমা সুরক্ষা বলের দাদগিরি-ভুটান সীমান্ত চৌকিতে প্রশিক্ষণ দেন তিনি। শেখান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জেরা করার পদ্ধতি। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অভিযুক্তের মুখ ও চেহারার বিবরণ নেওয়ার সময় কোন কোন বিষয়কে নজরে রাখতে হয়, কী ভাবে জেরা করে জেনে নিতে হয় জঙ্গি বা দুষ্কৃতীর চেহারার খুঁটিনাটি, সে বিষয়েই মূলত প্রশিক্ষণ দেন দেবাশিসবাবু।

দেবাশিসবাবুর কথায়, সাধারণত পুলিশ অ্যাকাডেমিতে মোল মার্ক, কাট মার্ক ও বার্ন মার্ক সম্পর্কে জানতে বলা হয়। কিন্তু মাথার কোন দিকে সিঁথি, চুলের ধরণ, চোখের ধাঁচ, মুখের প্রকার, কপাল ও চোখের পাশের চামড়ার ভাঁজ, দাঁতের আকার সম্পর্কে পুলিশি জেরায় জানতে চায় না। অথচ অপরাধীর চেহারা পুনর্নির্মাণে এগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বক্তব্য, পুলিশি জেরার বর্ণনা থেকে ছবি আঁকা খুবই কঠিন। সে কারণেই জেরার ধরণটাই আরও নির্দিষ্ট করার লক্ষ্যে তাঁর প্রশিক্ষণ। এসএসবির পরে কর্নেল বিশাল চৌধুরীর আমন্ত্রণে সেনাবাহিনীর শিখ লাইট ইনফ্রান্ট্রির জওয়ানদেরও একদিনের প্রশিক্ষণ দিলেন দেবাশিসবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement