প্রতীকী ছবি।
করোনা আবহে বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য কড়া বিধিনিষেধ জারি করেছে রাজস্থান সরকার। কিন্তু এই সতর্কতার আগেই বিয়ের মজলিশে যোগ দিয়ে চরম বিপদ ডেকে এনেছে ঝুনঝুনু শহরের শিয়ালোকালার মতো গ্রাম। গত ২৫ এপ্রিল গ্রামের তিনটি বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। এবং তার পরেই এক দিনে সেখানে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ জন। মারা গিয়েছেন কনের বাবা নিজে।
উৎসবের মাসুল গুনতে এখন স্তব্ধ গোটা গ্রাম। রাস্তায় বাচ্চাদের খেলার আওয়াজ নেই, নেই গাড়ি চলার সামান্যতম শব্দও। প্রতি বাড়ির দরজা বন্ধ। জানলা দিয়ে দু’একটা মুখ উঁকি দিলেও সরে যাচ্ছে দ্রুত। এক স্থানীয় বাসিন্দা সুরেন্দ্র শেখাওয়াত বলেছেন, ‘‘গ্রামের ৯৫ জন করোনা আক্রান্ত! ২৫ এপ্রিল এখানে তিনটি বিয়েবাড়ি ছিল। মানুষ তখন যেন ভুলেই গিয়েছিল করোনার কথা। নমুনা পরীক্ষার পরেও সবাই ঘুরে বেড়িয়েছে। এখন সবার টনক নড়েছে। ঘরে ঢুকে বসে রয়েছে গোটা গ্রাম।’’ এপ্রিলের শেষে সেই বিয়ে মেটার পরে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। প্রথম শিকার হন পাত্রীর বাবা, পাপ্পু সিংহ। সুরেন্দ্র জানান, শিয়ালোকালা গ্রামটা এখন প্রায় ‘একঘরে’। সবাই নাম শুনেই ভয় পাচ্ছে। দুধ, আনাজের মতো জরুরি পণ্যও পাওয়া যাচ্ছে না। ‘‘প্রশাসন আমাদের সুর্যগঞ্জ যেতে বলছে। কিন্তু লকডাউনে তা কী করে সম্ভব,’’ প্রশ্ন বীরেন্দ্র সিংহ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার।
উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা না থাকায় চিকিৎসা পাচ্ছেন না করোনা-আক্রান্তেরা। জীবনের প্রতি পদে অনিশ্চয়তা। ২৫ এপ্রিল বিয়ে ছিল দৌলতের। তাঁর মা বিমলা জানিয়েছে, পরিবারের প্রত্যেকে এখন করোনা পজ়িটিভ। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘প্রশাসনের তরফে এসে ওষুধ দিয়ে চলে গিয়েছে সেই কবে। তার পরে কেউ আর খবর নিতে আসেনি। আমাদের ভয় করছে। ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে বাড়িতে। দোকানে গেলে কেউ জিনিস বিক্রি করতে চাইছে না। বাড়িতে দুধ, আনাজ প্রায় নেই। এর পরে কী হবে জানি না।’’
নতুন রঙ করা ফিটফাট স্বাস্থ্য কেন্দ্র একটা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার দরজায় বিরাট তালা। দারা সিংহ নামে এক স্থানীয় যুবক বলেছেন, ‘‘শহরে তো অনেক হাসপাতাল রয়েছে। অথচ আমাদের এখানে ইঞ্জেকশন নেওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। আমাদের তার জন্য সূর্যগঞ্জে যেতে হয়। গ্রামের কোনও মানুষের কিছু হলে সাধারণ ওষুধ পেতেও চরম হয়রানির মুখে পড়তে হয়।’’