নীরাজয় ত্রিপুরা। আগরতলা থেকে প্রায় ১৭৬ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চল ‘৩২ কিলো’ বাজারে প্রচারপত্র বিলি করছেন। নিজস্ব চিত্র
সিপিএম বিভিন্ন দাবি নিয়ে সর্বভারতীয় আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছে। বুধবার ত্রিপুরাতেও পালন হবে এই কর্মসূচি। কোভিড অতিমারিই হোক বা দলের কর্মীদের উপরে হামলা, কিংবা রাজনৈতিক উৎসাহে ভাটা— কারণ যা-ই হোক তরুণ প্রজন্মকে সে ভাবে পথে নামাতে পারছে না সিপিএম। আর এই পরিস্থিতিতেও পথে পথে প্রচার চালাচ্ছেন অকুতোভয় ৯৩ বছরের এক ‘তরুণ’।
পার্টিকে সুসংহত করতে ত্রিপুরার পাহাড়-জঙ্গল চষে বেড়াচ্ছেন নীরাজয় ত্রিপুরা। ধলাই জেলার ছামনু বিধানসভা কেন্দ্রের দু’বারের বিধায়ক দলের এই জনজাতি নেতার হাতে ও ঝোলায় সরকারের কাছে মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে প্রচারপত্র। গ্রামের মানুষের হাতে হাতে বিলি করছেন তা। ছামনু বাজার থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে ‘৩২কিলো’ বাজারে মিলছে তাঁর। অনেক পুরানো সমর্থকরা এসে জড়ো হচ্ছেন তাঁকে দেখতে। তাঁর কথা শুনতে।
কিন্তু তরুণ প্রজন্ম কোথায়? সিপিমের রাজ্যসম্পাদক গৌতম দাসের বক্তব্য, এটা ঠিক যুব সম্প্রদায় আশাব্যঞ্জক ভাবে আসতে পারছে না। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। বেশ কয়েক জন কর্মী আহতও হয়েছেন। তবে দল প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকই।
বয়স কত? কোভিড বা হামলার ভয় করেন না? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেন নিরাজয়বাবু। বলেন, “এখন বয়স ৯৩। ৬৭ সালে পার্টিতে যোগ দিই। দলের কাজ শুরু করি রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী বৈদ্যনাথ মজুমদার ও মন্ত্রী পূর্ণমোহন ত্রিপুরার সঙ্গে।” এর পরে ভয়ের প্রসঙ্গে বলেন, “ভয়ে পার্টির কর্মীদের কি বসে থাকলে চলবে? ঘাবড়াই না, পার্টিটা তো করতে হবে। ২৬ অগস্ট দলের কর্মসূচি সফল করার জন্যে লুকিয়ে লুকিয়ে মিটিং করছেন। সবাইকে বলেছি আগামীকাল আসতে।” হাসি মিলায় না মুখ থেকে। ৯৩ পেরনো মানুষটি বলে চলেন, “অনবরত হুমকি দিচ্ছে, পেটানোর ভয় দেখায় তার পরেও যাই।”
নিয়ম করে প্রত্যেক দিন পার্টির অফিসে যান নিরাজয়বাবু। জানালেন, নতুন সরকার আসার পর এ পর্যন্ত তিনবার দলীয় অফিসে আক্রমণ হয়েছে। তাঁকে নিগ্রহ না-করলেও, তাকেও সরিয়ে দেয় শাসক দলের কর্মীরা। গ্রামের ও পাহাড়ের ভেতরের দিকে পার্টির কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। সমর্থক আছে, কিন্তু শাসক দলের কর্মীদের হুমকিতে কেউ আসতে পারেন না। নীরাজয়বাবু তাঁর নিজের বাড়িতেই যেতে পারেন না লোকসভার নির্বাচনের পর থেকে। রাস্তাঘাট ভেঙে যাতায়াতও বন্ধ। ২০০টি পরিবার রয়েছে তাঁর গ্রামে।
লংতরাই মহকুমা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আশিস সাহা বললেন, “ওঁকে সবাই ভালবাসেন। এমনকি বিরোধীরাও তাঁকে শ্রদ্ধা করেন। নীরাজয় মানে কোনও কিছুর জন্যে প্রার্থনা করা। বামপন্থীরা ফিরে আসুক প্রাথর্না করছেন তিনিও।” সে প্রার্থনা অবশ্য ঘরে বসে হাতজোড় করে নয়। পথে নেমে হাত বাড়িয়ে দলের প্রচারপত্র মানুষের হাতে তুলে দিয়ে।