বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের হিন্দি-বলয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বজ্রপাতে মারা গেলেন ৬৯ জন। এর মধ্যে শুধু বিহারেই সরকারি ভাবে ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারি ভাবে সংখ্যাটা ৫৬। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডে যথাক্রমে ১২ ও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে তিন রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের আশঙ্কা।
এমনিতেই উত্তর ভারত বজ্র-প্রবণ এলাকা। তার উপর এই তিন রাজ্যেই সবে বর্ষা ঢুকেছে। এই সময় মাঠে চাষের কাজ শুরু হয়ে যায়। ফলে এর সঙ্গেই বজ্রাঘাতে মৃত্যুর সম্ভাবনাও বহুগুণ বেড়ে যায়।
বিহারের রোহতাস ও পটনা জেলাতেই মৃতের সংখ্যা ১৬। বিহার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পদস্থ কর্তা অনিরুদ্ধ কুমার বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে ৪৭ জনের মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছেছে। আশঙ্কা, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’’ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী
নীতীশ কুমার পদস্থ কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে বজ্রপাতে মৃত্যু ও প্রথম বর্ষার ভারী বর্ষণে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে পরিস্থিতি কী ভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, বজ্রপাতে মৃত্যুর যে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত আইন রয়েছে, তা মেনেই মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের নিকটাত্মীয়কে ৪ লক্ষ টাকা করে দেওয়া কথা ঘোষণা করেছেন।
উত্তরপ্রদেশে বাজের বলি ১২। মৃতদের মধ্যে আবার ৬ জনই শিশু। গত কাল বিহার সংলগ্ন রাজ্যের পূর্বাংশে পাঁচ শিশু-সহ মোট ৬ জন বাজ পড়ে মারা যান। গাজিপুরেও বাজ পড়ে একটি শিশু-সহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম ৪। গত কয়েক দিন ধরেই উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু এলাকায় বজ্র-বিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টি চলছে। লালগঞ্জ, রানিগঞ্জ, ছায়াল প্রভৃতি জায়গায় এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ১০০ মিলিমিটার।
এ দিকে, বিহার সংলগ্ন ঝাড়খণ্ডের তিন জেলায় বজ্রাহত হয়ে দশ গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। আহত বেশ কয়েক জন। বর্ষা নামতে না নামতেই ঝাড়খণ্ডে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা ২৫ ছাড়িয়ে গিয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, এই বছরও ঝাড়খণ্ডের কয়েকটি জেলায় প্রচুর বজ্রগর্ভ মেঘের সঞ্চার হয়ে বজ্রপাত হবে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দাবি, তারা বারবার গ্রামবাসীদের সর্তক করছেন। বেশ কিছু আগাম সর্তকতাও নিতে বলেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঝাড়খণ্ডে বজ্রপাতে মৃত্যু আটকানো যাচ্ছে না।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কাল সন্ধ্যা থেকে প্রবল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয় গঢ়বা, চাতরা ও পলামুতে। চাতরার কুন্দা গ্রামে একটি কুঁড়েঘরে বাজ পড়ে একই পরিবারের দুই শিশু-সহ এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। ওই বাড়ির আরও তিন বাসিন্দা জখম হয়ে চাতরার জেলা হাসপাতলে ভর্তি। গঢ়বার তিনটি গ্রামে বজ্রপাতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদের মধ্যে চার জন শিশু ও এক জন বৃদ্ধ। ঘটনার সময় এরা সবাই একটি গাছের তলায় আশ্রয় নিয়েছিল। ঝড়বৃষ্টি চলছিল পলামু জেলা জুড়েও। সেখানে হুসেনাবাদ গ্রামে বজ্রপাতে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়। রাঁচির আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর বি কে মণ্ডল বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের কয়েকটি জেলা ভীষণ বজ্রপাত-প্রবণ।’’