রক্ষা ৫০০ কোটির! স্বস্তি টিভি ও বলিউডে।
গত কালই বম্বে হাইকোর্টের রায়ে ২০০২ সালের গাড়ি চাপা দিয়ে অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলায় নিঃশর্ত রেহাই পেয়েছেন সলমন খান। ১৩ বছরের উদ্বেগ বদলেছে স্বস্তিতে। হাঁফ ছেড়েছেন বলিউডের একাধিক প্রযোজক, বিজ্ঞাপন সংস্থা ও টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ।
যশ রাজ ফিল্মসের ব্যানারে ‘সুলতান’ নামের নতুন একটি ছবির কাজ করছেন সলমন। কাজটা প্রায় শেষ। তারকার পাঁচ বছর কারাদণ্ডের সাজা বহাল থাকলে শেষ লগ্নে বিপাকে পড়তেন প্রযোজক আদিত্য চোপড়া। ‘সুলতান’ ছাড়াও আরও কিছু বিগ বাজেটের ছবিতে সই করে রেখেছেন সলমন। তালিকায় আছে বক্স অফিস কাঁপানো ‘কিক’-এর সিকোয়েলও। টেলিভিশন রিয়েলিটি শো (বিগ বস ৯) সঞ্চালনার কাজও করছেন তিনি। সঞ্চালক হিসেবে সলমনের দক্ষতাই টিআরপি-র শিয়রে পৌঁছে দিয়েছে অনুষ্ঠানটিকে। মাঝপথে সলমন সরে গেলে নিঃসন্দেহে বড়সড় ধাক্কা খেতেন প্রয়োজকেরা। তা বাদে অন্তত আটটি বহুজাতিক সংস্থা তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে টাকা ঢেলেছে সলমনের উপর। ফলে, সলমনের শাস্তি হলে বিপুল আর্থিক ধস সামাল দিতে হতো তাদেরও। আগামী ২৭ ডিসেম্বর ৫০-এ পা দিচ্ছেন সলমন। হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে একযোগে বলিউড বলছে, ‘‘জন্মদিনের সেরা উপহার পেলেন সলমন।’’
যারপরনাই খুশি বাবা সেলিম খান। আদালতে যেতে পারেননি গত কাল। সুখবরটা পেয়েছিলেন ফোনে। ছেলেকে শুভেচ্ছা জানান তখনই। আজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সলমনের সঙ্গে যাঁদের আত্মিক যোগ রয়েছে তাঁরা সকলে খুশি। খুশি আমিও। চিন্তামুক্ত লাগছে বহুদিন পর।’’ যাঁরা সলমনের মুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, আজ তাঁদেরও এক হাত নিয়েছেন বর্ষীয়ান চিত্রনাট্যকার। বলেছেন, ‘‘মানুষ বলছে সলমন ছাড় পেয়েছে...। ওকে কিন্তু বেশি কিছু দিন জেল খাটতে হয়েছিল। মামলার জন্য ২০-২৫ কোটি খরচ করেছে ও।’’ এক দশকেরও বেশি সময় চূড়ান্ত টালবাহানার মধ্যে কাটানোর কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।
আজ সলমনের পাশে দাঁড়িয়েছেন শাহরুখ খানও। তাঁর কথায়, ‘‘বিতর্কে যেতে চাই না। ব্যক্তিগত ভাবে বলছি, ও আমার বন্ধু, সহকর্মী, দীর্ঘ সময় ধরে একে অপরকে চিনি আমরা। ওর ভাল হলে আমাদের সবার ভাল লাগে।’’
তবে আছে ছবির উল্টো দিকও। বৃহস্পতিবার সুবিচারের আশায় সুদূর লখনউয়ে টিভির পর্দায় চোখ আটকে রেখেছিলেন মন্নু খান। ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে সলমনের এসইউভি-র ধাক্কায় পা ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। আদালতের সিদ্ধান্তে তুমুল ক্ষুব্ধ মন্নু। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমরা গরিব। সরকারই আমাদের হয়ে লড়াই করছিল। সরকার যদি সলমনকে শাস্তি দিতে না চায়, আমরা কী করব।’’
রায় ঘোষণার সময় মুম্বইয়ের মালবনির ঘিঞ্জি বস্তিতে ছটফট করছিলেন বছর পঁচিশের ফিরোজ শেখও। ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে বাবাকে হারিয়েছিলেন ফিরোজ। সলমনের এসইউভি-র তলায় চাপা পড়েছিলেন বাবা নারুল্লা খান। পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের হাল ধরতে হয় ফিরোজকে। আর্থিক ক্ষতিপূরণেও প্রলেপ পড়েনি ক্ষতে। হাইকোর্টের রায় শুনে ফিরোজের প্রতিক্রিয়া, ‘‘গাড়িটা তা হলে কে চালাচ্ছিল?’’
প্রশ্নটা থেকে গেল।