ভোররাত। রাস্তায় ট্রাফিকও কম। তাই নিয়ম ভেঙেই একটি ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ট্যাঙ্কার-চালক। বিপদ বাধল তাতেই। গাড়ি তো এক চুল নড়লই না। ফ্লাইওভারে আটকে গেল ট্যাঙ্কার। উল্টে তার ভাল্ভ ফেটে গিয়ে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ল বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস।
শনিবার লুধিয়ানার দোরাহা এলাকার ঘটনা। পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি শতাধিক।
সে সময় রাস্তায় ছিলেন জনা পাঁচেক লোক। নিঃশ্বাসের সঙ্গে অ্যামোনিয়া ঢুকে গিয়ে মৃত্যু হয় তাঁদের। এ দিকে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জুড়ে ছড়িয়ে যায় বিষ-গ্যাস। ধোঁয়ায় কষ্ট হতে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। হয়তো ভেবেছিলেন, খোলা হাওয়ায় এলে কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। কিন্তু বিপদ আরওই বাড়ে। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ-অ্যাম্বুল্যান্স। দ্রুত ফাঁকা করে দেওয়া হয় এলাকা। বাসিন্দাদের সরানো হয় অন্যত্র।
কী হতে পারে অ্যামোনিয়া থেকে? ঝাঁঝালো গ্যাসটি শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে শ্বাসনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ক্ষতি করে চোখেরও। ত্বকেও নানা সমস্যা দিতে পারে। এতো গেল ছোটখাটো সমস্যা। রক্তে খুব বেশি পরিমাণ অ্যামোনিয়া মিশে গেলে মানুষ কোমায় চলে যেতে পারে। কিংবা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ঘটনার সময় রাস্তায় সে রকম লোকজন ছিল না। কিন্তু যে পাঁচ জন লোক ছিলেন, তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই শ্বাসনালিতে কষ্ট, চোখে সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঘটনার গুরুত্ব টের পেয়ে প্রশাসন তড়িঘড়ি খবর পাঠায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে (এনডিআরএফ)। দ্রুত চলে আসে তারাও। বৃষ্টির মতো জল ছেটাতে শুরু করে ট্যাঙ্কারের উপর। তাতে ধীরে ধীরে অ্যামোনিয়ার ঘনত্ব কমতে থাকে। বিপদ কাটলে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ট্যাঙ্কারটিকে। এএসপি গুরপ্রীত সিংহ গিল জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পুরোটাই চালকের গাফিলতিতে ঘটেছে। আদৌ ট্যাঙ্কারটি ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে যেতে পারে কি না, তা দেখে নেওয়া উচিত ছিল ওই চালকের। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। চালক অবশ্য পলাতক।
এ দিন বেলা অবধি দোরাহার বাতাসে ঝাঁঝালো গ্যাসের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজনকে দেখা যায় মুখোশ পরে রাস্তায় হাঁটাচলা করতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেরই বক্তব্য, হাজার খানেক মানুষ বিষ-গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সরকার কমিয়ে দেখাচ্ছে। খন্না শহরের ডেপুটি কমিশনারের কথায়, ‘‘মাত্র পাঁচ জন মারা গিয়েছেন। অসুস্থ ১১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সরকার তাঁদের চিকিৎসার খরচ বহন করবে।’’ তবে রাত না হয়ে দিন হলেই, আরও বড় ক্ষতি হতে পারত।