বিধানসভায় ‘অশ্লীল’ আলোচনা হচ্ছে বলে প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াকআউট করলেন চার জন বাম মহিলা বিধায়ক। প্রথমে তাঁরা আলোচনা বন্ধের দাবি জানালেন। তখন শাসক বামফ্রন্টেরই কিছু বিধায়ক-মন্ত্রী তাঁদের ইশারায় চুপ করতে বলেন। কিন্তু শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, বামফ্রন্টের মুখ্যসচেতক বাসুদেব মজুমদারের সামনে দিয়ে ওয়াকআউট করেন ওই চার জন। সোমবার এমনই অস্বস্তিকর ঘটনার সাক্ষী থাকল ত্রিপুরা বিধানসভা এবং ত্রিপুরা বামফ্রন্ট।
কেন এমন ঘটল?
বিধানসভায় আলোচনার বিষয় ছিল রাজ্যে এড্স রোগের বাড়বাড়ন্ত। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এবং রাজ্য এডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নথি অনুযায়ী, প্রতি বছরই ত্রিপুরায় এড্স রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কী করে এই রোগের প্রকোপ রোখা যায় এবং সরকার তার জন্য কী করতে পারে, সেটাই ছিল এ দিনের আলোচনার উপজীব্য। সেখানে ‘অশ্লীল’ বিষয় এল কোথা থেকে? স্কুলেও এখন এড্স সচেতনতা বাড়াতে জীবনশৈলীর পাঠ দেওয়া হয়। এড্স প্রতিরোধে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দু’পক্ষই লাগাতার প্রচার চালায়। মহিলা বিধায়করা কি তা জানতেন না? ঘটনা হল, এড্স ঠেকাতে রাজ্য সরকারের তরফে যৌনপল্লি গড়ে দেওয়া উচিত কি না, এই প্রশ্ন ওঠাতেই প্রতিবাদ জানান চার মহিলা বিধায়ক।
রাজ্য সরকারের তরফে যৌনপল্লি গড়ার প্রশ্ন উঠল কেন? কারণ, ত্রিপুরায় যৌনকর্মী থাকলেও যৌনপল্লি নেই। কংগ্রেস বিধায়ক রতনলাল নাথের তাই প্রশ্ন ছিল, এই পরিস্থিতিতে যৌনকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য কেন যৌনপল্লি তৈরি করা হবে না? তা হলে এড্স সংক্রমণের সম্ভাবনা কমতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।
বিরোধী বেঞ্চ থেকে এই প্রশ্নটি ওঠার পরেই শাসক সিপিএমের মহিলা বিধায়ক বিজয়লক্ষ্মী সিংহ উঠে দাঁড়িয়ে এই আলোচনা বন্ধের দাবি জানান। পাশাপাশি, সিপিএমের আরও তিন মহিলা বিধায়ক রীতা কর মজুমদার, টুনুবালা কর্মকার, গৌরী দাসও একই দাবি জানাতে থাকেন। সহকর্মীদের এই আচরণে হতাশ কিছু বিধায়ক ও মন্ত্রী তাঁদের বসে পড়তে ইশারা করেন। উত্তেজিত মহিলা বিধায়করা তখনকার মতো নিজেদের আসনে বসেন।
যৌনব্যবসা এ দেশে আইনসিদ্ধ নয়। ফলে নৈতিক প্রশ্ন বাদ দিলেও সরকারের তরফে আদৌ যৌনপল্লি গড়ে দেওয়া সম্ভব কি না, সে প্রশ্ন তাই থাকছে। সরকারই যদি যৌনপল্লি তৈরি করে, তা হলে যৌনব্যবসায় উৎসাহ দেওয়া হবে বলেই অনেকের মত। আবার, যৌনব্যবসা যদি নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে আড়ালে-আবডালে চলতে থাকে তা হলে এড্স ছড়ানো আটকানো যাবে কী করে?
পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশনের প্রধান সুনন্দা মুখোপাধ্যায় মনে করছেন, সমস্যাটা জটিল। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার যেমন সমস্যা থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারে না, তেমনই যৌনপল্লি গড়ে দেওয়াটাও সরকারের কাজ হতে পারে না। সমাজের সব স্তরে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’’
এ দিন ত্রিপুরা বিধানসভায় জবাব দিতে উঠে রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বিজিতা নাথও বলেছেন, ‘‘সরকারি ভাবে এ রাজ্যে যৌনকর্মীদের উত্সাহ দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।’’ তবে কেউ যদি এ ধরনের কাজের ফলে এড্স আক্রান্ত হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তাঁকে সরকারি ভাবে কোনও আর্থিক সাহায্য দেওয়া যায় কি না, তা বিবেচনা করা হবে। কংগ্রেস বিধায়ক তখন বলেন, ত্রিপুরায় বর্তমানে ৫,১৪৫ জন মহিলা যৌনকর্মী রয়েছেন। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের উদ্যোগী হওয়া উচিত। এই আলোচনা চলতে থাকাকালীনই চার মহিলা বিধায়ক উঠে দাঁড়িয়ে সটান ওয়াক আউট করেন।
প্রশ্ন হল, এড্স এবং যৌনব্যবসার মতো বিষয়কে ‘অশ্লীল’ বলে দেগে দিয়ে কেন ধামাচাপা দিতে চাইছেন কিছু বাম মহিলা বিধায়ক? এতে কি সমস্যার সমাধান হবে? ত্রিপুরা বামফ্রন্ট এই ঘটনায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে। বাংলা থেকে সুনন্দাও একই প্রশ্ন তুলে বললেন, ‘‘এড্স নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে জনপ্রতিনিধিদের বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। ওয়াকআউট করে তাঁরা দায় এড়াতে পারেন না।’’