আহত আলাতোকে দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
চব্বিশ ঘণ্টাও কাটল না। ফের উত্তর-পূর্বের তিন যুবককে মারধরের ঘটনা ঘটল। বেঙ্গালুরুর পরে এ বার গুড়গাঁও। মঙ্গলবার রাতে বেঙ্গালুরুর এক রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে মার খেয়েছিল মণিপুরের ছাত্র মাইকেল লামদাথাং হাওকিপ। আর কাল মাঝ রাতে গুড়গাঁওয়ের কাছে একটি বাড়িতে বেধড়ক মারধর করা হল নাগাল্যান্ডের তিন যুবককে। প্রহৃত তিন জনের মধ্যে দুই যুবকের অবস্থা গুরুতর। তাঁরা এখন গুড়গাঁওয়ের সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গুড়গাঁও শহর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে সিকন্দরপুর গ্রাম। সেখানেই একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন নাগাল্যান্ড থেকে আসা তিন যুবক। ওই এলাকায় তাঁদের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের অনেক যুবকই ভাড়া থাকেন। তিন জনের মধ্যে দু’জনের নাম জানা গিয়েছে। এক জন আলাতো ওরফে জেমস। অন্য জনের নাম আয়ুগ। আলাতো একটি কল সেন্টারে কাজ করেন। আয়ুগ আপাতত বেকার। অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে মদ খেতে হবে বলে আলাতোদের জোর করেন সিকন্দরপুরের কয়েক জন যুবক। কিন্তু আলাতোরা তাতে রাজি হননি। সেই থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। এর পরই কাল রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ জনা আটেক যুবক আলাতোদের ঘরে ঢুকে পড়ে। ঘণ্টা তিনেক ধরে চলে বেধড়ক মারধর। তাঁদের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের বাকি সব যুবককে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। এর পরে আলাতোর মাথাও কামিয়ে দেওয়া হয়। মারাত্মক জখম ওই যুবকদের আজ সকালেই গুড়গাঁওয়ের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে আলাতোর জখম বেশি গুরুতর হওয়ায় পরে তাঁকে দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
তবে এত মার খাওয়ার পরেও থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি ওই যুবকরা। ডিএলএফ ফেজ ওয়ান-এর স্টেশন হাউস অফিসার জানিয়েছেন, দুই চিকিৎসাধীন যুবকের মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা শুরু করেছে। অভিযুক্ত গ্রামবাসীদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে।
উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের উপর একের পর এক হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। চলতি বছরের গোড়ায় খাস রাজধানীর বুকে এক দল হামলাকারীর আক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল অরুণাচলপ্রদেশের ছাত্র নিদো তানিয়ার। তার পর লোকসভা নির্বাচনের সময় উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে প্রচারে গিয়ে সেই বিষয়টিকেই হাতিয়ার করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। অরুণাচলপ্রদেশে প্রচারে গিয়ে মোদী তখন বলেছিলেন, “যে কংগ্রেস সরকারের আমলে উত্তর-পূর্বের যুবক-যুবতীরা রাজধানীতেই সুরক্ষিত নয়, সেই কংগ্রেসকে আর ক্ষমতায় আসতে দেবেন না।” আর বিষয়টা হল বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলেও বিদ্বেষের সেই ছবিটা কিন্তু একই থেকে গিয়েছে। বেঙ্গালুরু আর গুড়গাঁওয়ের ঘটনাই তার সব চেয়ে বড় প্রমাণ।
বেঙ্গালুরুর ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই হওয়ায় আজ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি জানান, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে খুব শীঘ্রই কথা বলবেন তিনি। তাঁর কথায়, “বর্ণ-জাতির ভিত্তিতে কারও বিরুদ্ধে কেউই বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারে না। দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” গুড়গাঁওয়ের ঘটনার প্রেক্ষিতেও নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। হরিয়ানা সরকারের কাছে এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর। দোষীদের ধরতে রাজ্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জানতে চাওয়া হয়েছে তা-ও।