দাউদ ইব্রাহিম।—ফাইল চিত্র।
নির্বাচন কমিশনে বিজেপির দেওয়া হিসেবকেই অস্ত্র করল কংগ্রেস। দেশদ্রোহের গুরুতর অভিযোগ আনল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সালে মুম্বই বিস্ফোরণে অভিযুক্ত ইকবাল মির্চির সঙ্গে জড়িত তিনটি সংস্থা বিজেপিকে ১০ কোটি, ৭.৫ কোটি ও ২ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে চাঁদা দিয়েছে। এই তথ্য তুলে ধরে কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা আজ অমিত শাহের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘‘এটা দেশদ্রোহ নয়? এটাই কি তবে মিথ্যা জাতীয়তাবাদ?’’
আজ সকালে সংসদের গাঁধীমূর্তির সামনে কংগ্রেস বন্ড-কেলেঙ্কারি নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। রাজ্যসভায় বিষয়টি উত্থাপন করতে গেলে চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু থামিয়ে দেন। অভিযোগের কোনও ‘রেকর্ড’ রাখা হয়নি। মন্ত্রীদেরও জবাব দিতে বারণ করেন। তখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের হাতে যে তথ্য এসেছিল, তাতে প্রসঙ্গ ছিল শুধু দুর্নীতির— অর্থ মন্ত্রকের আপত্তি উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর কর্নাটকের বিধানসভা ভোটের আগে নতুন বন্ড কেনার সুযোগ করে দিয়েছে। তথ্য জানার অধিকার আইনে দেখা যাচ্ছে, ১৫ দিনের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও ১০ কোটি টাকার বন্ড গ্রহণের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ককে।
গত কাল নির্বাচনী বন্ডের অভিযোগ আসার পর রাতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপির ‘অঘোষিত’ কোষাধ্যক্ষ পীযূষ গয়ালকে দিয়ে জরুরি সাংবাদিক বৈঠক করানো হয়েছিল। কিন্তু আজ সন্ত্রাসের অর্থ চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ আসার পরেও বিজেপি কোনও সাংবাদিক বৈঠক করে আনুষ্ঠানিক ভাবে অভিযোগ খণ্ডন করেনি। কংগ্রেসের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘কোন মুখে খণ্ডন করবে? হিসেব তো খোদ বিজেপিই দিয়েছে। আর সেই হিসেব ২০১৭ পর্যন্ত। ২০১৮-য় চালু হয় নির্বাচনী বন্ড। এর পর থেকে বন্ডের মাধ্যমে গোপনেই সন্ত্রাসের টাকা নেয় বিজেপি। বিদেশের টাকাও আসতে পারে। আগে টাকা নেওয়ার সীমা ছিল, এখন তো তা-ও নেই।’’
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপির যুক্তি, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আরও বেড়েছে। নগদে লেনদেনের সুযোগ নেই। গত কাল পীযূষ বলেন, কংগ্রেস এত দশক দুর্নীতি করে এসেছে। কালো টাকা দেশের অর্থনীতিতে ফিরিয়ে আনতে চালু করা হয়েছে নির্বাচনী বন্ড। কংগ্রেসই এর বিরোধিতা করছে। ১৫টি কাজের দিনেই বন্ড গ্রহণ করা হয়েছে। অন্য ১০ কোটি টাকার বন্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে গিয়েছে।
কংগ্রেস আজ বলেছে, নিয়ম হচ্ছে ক্যালেন্ডারের ১৫ দিন। ১৫টি কাজের দিন নয়। কর্নাটকের ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের আগে বিধায়ক কেনাবেচা করতেই এই বন্ড খোলা হয়। তার মানে বিজেপিকে সুবিধা করার জন্য মোদী সরকার আর্থিক নয়ছয় করেছে। কে টাকা দিচ্ছে, তা-ও জানত সরকার এবং বিজেপি!
প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও আজ টুইটে পীযূষের সাংবাদিক বৈঠককে কটাক্ষ করে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এক মন্ত্রী কাগজ পড়ে গেলেন। কিন্তু এই সব প্রশ্নের জবাব কী? ১) (নির্বাচনী বন্ড চালু করার ক্ষেত্রে) রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও নির্বাচন কমিশনের আপত্তি কি উপেক্ষা করা হয়েছে? ২) প্রধানমন্ত্রী কি কর্নাটকে ভোটের আগে বেআইনি ভাবে বন্ড কেনার অনুমতি দিয়েছেন? ৩) চাঁদা দেওয়া ব্যক্তির পরিচয় গোপনীয়, এটি কি মিথ্যা বলেছে সরকার?’’