ছবি: পিটিআই।
ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অব বড়োল্যান্ডের সঙ্গে আজ চুক্তি করল অসম ও কেন্দ্রীয় সরকার। ‘বড়ো’ সমস্যা মেটাতে চেষ্টা চলছিল পাঁচ দশক ধরে। কার্যত পৃথক বড়োল্যান্ডের দাবি এবং বহুচর্চিত ইউনিয়ন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলকে পাশ কাটিয়েই আজ স্বাক্ষরিত হল তৃতীয় বড়ো চুক্তি। ত্রিপাক্ষিক এই চুক্তিতে বড়োদের পক্ষে এনডিএফবির তিনটি শাখা ও বড়ো ছাত্র সংগঠন আবসুর প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করেন। এ দিনের চুক্তির পরে বিটিএডির নাম বদলে হবে বড়োল্যান্ড টেরেটরিয়াল রিজিয়ন বা বিটিআর।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আশা, এই চুক্তির ফলে অসমে শান্তি ফিরবে। মনে করা হচ্ছে, ওই রাজ্যে প্রথমে এনআরসি, তার পর নয়া নাগরিকত্ব আইনের ধাক্কায় অসমিয়া ও বাঙালি দুই ভোট ব্যাঙ্কেই বড় কোপ পড়ার আশঙ্কায় বিজেপি তড়িঘড়ি ওই চুক্তি সেরে অন্তত বড়ো ভোটকে হাতে রাখার কৌশল নিল। বিজেপির আশা, বড়োদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় এক দিকে অসমে জঙ্গি সমস্যা মিটবে, অন্য দিকে বিধানসভা ভোটে ভোট বাক্সে বিজেপির পক্ষে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ দিন চুক্তির পরে অমিত শাহ বলেন, ‘‘বড়োভূমিতে স্থায়ী শান্তি আনতে কেন্দ্র বদ্ধপরিকর। চুক্তির জেরে ৩০ জানুয়ারি ১৫৫০ জন জঙ্গি মূল স্রোতে যোগ দেবেন।’’
আবসুর সঙ্গে ১৯৯৩ সালে প্রথম ও ২০০৩ সালে বড়োল্যান্ড টাইগারসের প্রধান হাগ্রামা মহিলারির সঙ্গে দ্বিতীয় চুক্তি করেছিল কেন্দ্র। যার ভিত্তিতে তৈরি হয় বড়োল্যান্ড স্বশাসিত পরিষদ। ফলে গত দু’দশক ধরে ধরে ১২ জন বিধায়ক হাতে থাকা হাগ্রামা অসমে ‘কিংমেকার’-এর ভূমিকা পালন করে এসেছেন। এমনকি আজকের শান্তি চুক্তির পিছনে তাঁরই উদ্যোগ রয়েছে বলে দাবি হাগ্রামার। ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি, সংবিজিৎ-কে বহিষ্কার করার পরে সাওরাইগাওড়া নেতা হয়েছিলেন। চলতি মাসে মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসে সাওরাইগাওড়া-র আত্মসমর্পণের পিছনে হাগ্রামার হাত রয়েছে বলে দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠদের।
আরও পড়ুন: ‘আমরা, ভারতের জনগণ...’
রাজনীতির অনেকেই বলছেন, আজকের চুক্তিতে হাগ্রামার রাজনৈতিক প্রতিপত্তি অনেকাংশেই ধাক্কা খাবে। কারণ, বড়ো স্বশাসিত পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও এ বার হাগ্রামার একচ্ছত্র ক্ষমতায় ভাগ বসাতে পারেন চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী এনডিএফবি এবং আবসুর নেতারা। হাগ্রামার দাবি, এই শান্তি চুক্তির মূলত তাঁরই উদ্যোগে সম্ভব হয়েছে। যগিও অন্য বড়ো সংগঠনগুলি তাঁর একক কৃতিত্ব মানতে নারাজ।
সাওরাইগাওড়া ভারতে ফেরার দু'সপ্তাহের মধ্যে শান্তি চুক্তি সেরে ফেলে, ধারাবাহিক বিস্ফোরণে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বড়ো নেতা রঞ্জন দৈমারিকে জামিন দিয়ে দিল্লি নিয়ে গিয়ে চুক্তি সই করিয়ে বিকল্প নেতৃত্বের উপরেই ভরসা রাখতে চাইছে বিজেপি। সেই লক্ষ্যে ও হাগ্রামার আধিপত্য ভাঙতে রাজ্য সরকার ও বড়োদের সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। যারা ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক সীমানা অদলবদলের পরে বড়ো এলাকায় জনজাতিদের সংরক্ষণের বিষয়টি দেখে অনুপাত একই রেখে আসন সংখ্যা ৬০ পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করবে।
এ দিনের চুক্তির পরে বিটিএডির নাম বদলে হবে বড়োল্যান্ড টেরেটরিয়াল রিজিয়ন বা বিটিআর। আগামী তিন বছরে প্রায় কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে দেড় হাজার কোটি টাকার অর্থ সাহায্য পাবে বিটিআর। বড়োভূমির বাইরে থাকা বড়োদের জন্য রাজ্য সরকার বড়ো-কছারি উন্নয়ন পরিষদ গড়বে। দখলমুক্ত করা হবে বড়োদের জমি। কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাওয়ে থাকা বড়োদেরও পার্বত্য তফসিলভুক্ত জনজাতির তালিকাভুক্ত করা হবে। বড়োকে সহকারী রাজ্য ভাষার মর্যাদা দেওয়া হবে। তৈরি হবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বড়ো রাজ্যের জন্য আন্দোলনে প্রাণ দেওয়া সকলের নিকটাত্মীয়কে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদের এককালীন টাকা অর্থ ও বিকল্প রোজগারের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। যে সব জঙ্গির বিরুদ্ধে সাধারণ মামলা আছে তা প্রত্যাহার হবে। যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মামলা আছে তাদের বিষয়টি আদালতের নির্দেশে একে একে বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ঘরে ফেরা জঙ্গিদের নিয়োগ করা হবে আধাসেনায়।