বিধ্বস্ত সেই আবাসন। ফাইল চিত্র।
সারা দেশকে কাঁপিয়ে দেওয়া গুজরাট দাঙ্গায় সবচেয়ে বড় গণহত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল গুলবার্গে। ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। গুলবার্গ সোসাইটির আবাসনে নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দাঙ্গাবাজেরা। খুন করা হয়েছিল প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরি সহ ৬৯ জনকে। আমদাবাদের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম আদালত সেই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করল ২৪ জনকে। দোষীদের মধ্যে আছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা অতুল বৈদ্য। তথ্য প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়েছে ৩৬ জনকে। আগামী সোমবার, ৬ জুন,দোষীদের শাস্তি ঘোষণা করবে আদালত।
এই গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যার মধ্যে দিয়েই গুজরাত জুড়ে শুরু হয়েছিল সংখ্যালঘু বিরোধী দাঙ্গার আগুন। আর এর ঠিক আগের দিনই ঘটেছিল গোধরার সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০২ গোধরা স্টেশনে সবরমতী এক্সপ্রেসের কামরার আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছেল ৫৯ জন করসেবকের। পর দিন সকাল ন’টা নাগাদ আমদাবাদের চমনপুরা এলাকায় মুসলিম বিরোধী স্লোগান দিতে দিতে হাজির হয় এক বিশাল বাহিনী। এই চমনপুরা এলাকায় মুসলিমদের সংখ্যাই বেশি। দাঙ্গাবাজের চড়াও হয় গুলবার্গ সোসাইটির আবাসনে। গোটা চল্লিশেক বহুতল বা বাংলো রয়েছে এই সোসাইটিতে। বসবাসবাসকারীদের প্রায় সবাই উচ্চ-মধ্যবিত্ত মুসলিম ব্যবসায়ী পরিবার। আবাসনে জড়ো হওয়া বাহিনীকে দেখে ভয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন তত্কালীন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির বাড়িতে। অভিযোগ, থানায় ফোন করেও কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। কয়েক ঘণ্টা ধরে হুমকি, গালিকালাজের পর দুপুর হতে না হতে হিংস্র হয়ে ওঠে সেই বাহিনী। দরজা বন্ধ করে দিয়ে আগুন লাগানো হয় একের পর এক বাড়িতে। চলতে থাকে মারধরও। সাংসদ জাফরি সহ ৩৫ জন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। নানা ভাবে খুন করা হয় আরও ৩৪ জনকে। ঘণ্টা ছ’য়েক ধরে চলেছিল এই নৃশংস গণহত্যাকাণ্ড।
এই ঘটনায় মোট ৬৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। মামলা চলাকালীন মৃত্যু হয় ছ’জনের। এর মধ্যে ভিএইচপি নেতা অতুল বৈদ্য সহ ২৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। ১৪ বছর পর বেরোনো এই রায়ে মুক্তি দেওয়া হয়েছে ৩৬ জনকে। ছাড়া পাওয়াদের মধ্যে আছেন বিজেপি নেতা বিপিন পটেল এবং পুলিশ ইনস্পেক্টর কেজি এর্দা।