বংশ-পঞ্জি খুঁজে পাননি পৌনে ২ কোটি অসমবাসী

হাতে সময় বাকি মাত্র ২৯ দিন। অথচ অসমে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ বাসিন্দার নাম এনআরসিতে ঢুকেছে! সরকারি হিসেবে, সওয়া তিন কোটি রাজ্যবাসীর মধ্যে পৌনে ২ কোটি এখনও তাঁদের ‘লিগ্যাসি ডেটা’ (বংশ-পঞ্জি) জোগাড় করতে পারেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

হাতে সময় বাকি মাত্র ২৯ দিন। অথচ অসমে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ বাসিন্দার নাম এনআরসিতে ঢুকেছে!

Advertisement

সরকারি হিসেবে, সওয়া তিন কোটি রাজ্যবাসীর মধ্যে পৌনে ২ কোটি এখনও তাঁদের ‘লিগ্যাসি ডেটা’ (বংশ-পঞ্জি) জোগাড় করতে পারেননি। এনআরসি তালিকাভুক্ত না হওয়ার আশঙ্কায় একের পর এক আত্মহত্যা, আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে ৫০০ কোটি টাকার এনআরসি প্রকল্পের সাফল্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অসম মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ধর্মীয় কারণে রাজ্যে আশ্রিত ভিন দেশের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে তাঁদের আপত্তি নেই। এ নিয়ে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠাচ্ছে অসম সরকার।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো, ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে নতুন জাতীয় নাগরিক পঞ্জি চূড়ান্ত করার কথা। এনআরসি ফর্ম পূরণ করে তা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। তার পর শুরু হবে ‘ফিল্ড ভেরিফিকেশন’। কিন্তু বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও কাজ একটুও এগোয়নি। লিগ্যাসি ডেটা খুঁজে পেয়েছেন মাত্র ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ। স্থানীয় সূত্রে খবর মিলেছে, বাবা ও স্বামী যে অসমের পুরনো বাসিন্দা, তা প্রমাণ করতে না পেরে শিলচরে এক সংখ্যালঘু মহিলার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। মরিগাঁওতে এক ব্যক্তি বিদ্যুৎস্তম্ভ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বোকাজান ও গোলাঘাটে দুই মহিলা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। গত কাল তিতাবরে এক সংখ্যালঘু যুবক বাবার নাম লিগ্যাসি ডেটায় খুঁজে না পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন।

এ সবের পাশাপাশি এনআরসি সেবাকেন্দ্রগুলিতে নিয়মিত যান্ত্রিক গোলযোগ, কর্মবিরতি, দালালদের উৎপাত চলছে। তাই কাজের গতি খুবই কম। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এ দিন মুখ্যসচিবকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর, শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের সুপারিশ জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিচ্ছে রাজ্য। ২০১২ সালে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব জমা পড়েছিল। গত বছর ১৭ জুলাই কংগ্রেস মন্ত্রিসভা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়। বলা হয়, অসম চুক্তি অনুযায়ী বহিরাগতদের ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের যে ভিত্তিবর্ষ বেঁধে দেওয়া হয়েছে, অত্যাচারিত হয়ে অসমে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না। শরণার্থীদের বিদেশি হিসেবে গণ্য করা হবে না। তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তার পর দিনই গৌহাটি হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের তরফে হলফনামা জমা দিয়ে জানানো হয়েছিল— বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে অসম। তবে, এ নিয়ে কেন্দ্রকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

কিন্তু এক বছর কেটে গেলেও মন্ত্রিসভার সেই প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়নি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যে ও কেন্দ্রে সরব হয়। গগৈ সরকারের এ দিনের পদক্ষেপ নিয়ে তাই বিজেপি মুখপাত্র শিলাদিত্য দেব বলেন, ‘‘মন্ত্রিসভা অনেক দিন আগেই বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু, সেটি কেন্দ্রে পাঠানো নিয়ে তখন ঢিলেমি করা হয়। ভোটের মুখে এ সব করে রাজ্যের অন্য সব সমস্যা ও দুর্নীতি থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে চাইছেন গগৈ।’’ শরণার্থীদের পক্ষে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলির বক্তব্য অনেকটা একই। অসম নাগরিক মঞ্চের সভাপতি তথা হোজাইয়ের কংগ্রেস বিধায়ক অর্ধেন্দু দে বলেন, ‘‘আমরা এই দাবি নিয়ে সোচ্চার হওয়ার পর রাজ্য সরকারের ঘুম ভেঙেছে। বিষয়টি নিয়ে ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে।’’ আসুর তরফে বলা হয়, এ ভাবে রাজ্য সরকার এনআরসি প্রক্রিয়াকেই অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে চাইছে। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর এনআরসি নিয়ে যে নির্দেশ দিয়েছে তা অনুসরণ করছে না রাজ্য। বিষয়টি নিয়ে তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement