National News

ধর্ষকের সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে দিলেন ধর্ষিতার বাবা-মা

মেয়ে ও তার সন্তানের বোঝা টানা সম্ভব হচ্ছে না বাবার পক্ষে। তাই ধর্ষক আসিফের সঙ্গেই তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বাবার দাবি অন্তত এমনই। নির্যাতিতার বাবা আরও জানান, প্রশাসনের কাছ থেকে মেয়ে ও তার সন্তানকে বড় করে তোলার জন্য অর্থসাহায্য চেয়েছিলেন তাঁরা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ১৫:৫৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল ১৪ বছর বয়সে। কিশোরীবেলা কাটতে না কাটতেই অপরিণত মা সে। ভারতীয় আইন অনুযায়ী ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত বৈধ। কিন্তু গর্ভপাতের অনুমতির জন্য আবেদন করতে অনেকটাই দেরি করে ফেলেছিল ওই কিশোরীর পরিবার। ১৯ সপ্তাহ ৬ দিনের ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা হওয়ার কারণে আলাদতের তরফে গর্ভপাতের অনুমতি মেলেনি বরেলীর ওই কিশোরীর। অবশেষে গত বছর অক্টোবরে সন্তানের জন্ম দেয় সে। সেই সময় গ্রেফতারও করা হয়েছিল ধর্ষণের প্রধান অভিযুক্ত আসিফ আলিকে। পরে জামিনে মুক্তি পায় সে। এ বার সেই আসিফের সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন ধর্ষিতা কিশোরীর বাবা।

Advertisement

মেয়ে ও তার সন্তানের বোঝা টানা সম্ভব হচ্ছে না বাবার পক্ষে। তাই ধর্ষক আসিফের সঙ্গেই তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বাবার দাবি অন্তত এমনই। নির্যাতিতার বাবা আরও জানান, প্রশাসনের কাছ থেকে মেয়ে ও তার সন্তানকে বড় করে তোলার জন্য অর্থসাহায্য চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বহু দরজায় হত্যে দিয়েও কোনও সাহায্য পাননি।

আরও পড়ুন: সুচ-কাণ্ডে উত্তরপ্রদেশ থেকে ধৃত সেই সনাতন

Advertisement

ধর্ষিতা কিশোরীও জানাচ্ছে, আটজনের সংসার চালাতে এমনিতেই হিমশিম খেতে হয় বাবাকে। পাশাপাশি রয়েছে আদালত ও চিকিৎসার খরচও। দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছিল পরিবার। এর উপরে সদ্যোজাতর ‘বোঝা’ ঘাড়ে এসে পড়ায় প্রবল অর্থকষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছিল।

এমন পরিস্থিতিতেই গ্রামের মোড়লদের দ্বারস্থ হয়েছিল পরিবারটি। মোড়লদের নির্দেশেই আসিফের সঙ্গে ওই কিশোরীর বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধর্ষিতা জানান, তার সন্তানের ভবিষতের দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়েছে আসিফ। তাই সে এখন সুখী।

ধর্ষিতার পরিবারের আইনজীবী ভি পি দয়ানি জানান, প্রশাসনের তরফে কোনও রকম সাহায্য না পেয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে ওই পরিবার।

আরও পড়ুন: স্তন্যদানের ছবি পোস্ট করে বিতর্কে প্রেসিডেন্টকন্যা

ঘটনাটি বছর খানেক আগের। পাশের গ্রামের আসিফ আলির বাড়িতে রান্নার কাজ করত মেয়েটি। তার একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে আসিফ তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ। ২০১৬-র জুন মাসে অসিফ আলির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল ধর্ষিতা কিশোরীর পরিবার। গ্রেফতার করা হয় আসিফ আলিকে। নতুন লড়াই শুরু হয় কিশোরীর পরিবারে। অবৈধ সন্তানকে মেনে নেবে না সমাজ, এই ভয়ে মেয়ের গর্ভপাত চেয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা। ২৬ জুলাই গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় ওই কিশোরী। ৪ অগস্ট ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে যায় তার মামলা। সেখানেও গর্ভপাতের অনুমতি না পেয়ে ফের ইলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ধর্ষিতার পরিবার। আদালত চিকিৎসকদের অনুমতি নিতে বলে। ৩ সেপ্টেম্বর আদালতের চিফ মেডিক্যাল অফিসার জানিয়ে দেন, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, গর্ভপাত সম্ভব নয়। এর পরে জেলাশাসকের কাছে দরবার করেন তাঁরা। কিন্তু গর্ভপাতের অনুমতি পাওয়া যায়নি সেখানেও। শেষ পর্যন্ত ১২ অক্টোবর রাত ১১টা নাগাদ প্রসব বেদনা শুরু হয় ওই কিশোরীর। স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা তার প্রসব করাতে অস্বীকার করায় অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বরেলী হাসপাতালে। হাসপাতালের পথে অ্যাম্বুল্যান্সেই সন্তানের জন্ম দেয় সে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement