ধনঞ্জয় ও সোনি হেমব্রম— ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।
ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা থেকে মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়র। যাত্রপথের দৈর্ঘ ১,১০০ কিলোমিটার। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে স্কুটারে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছিলেন ধনঞ্জয় কুমার! কারণ, স্ত্রী সোনি হেমব্রম পরীক্ষায় বসতে না পারলে বছর নষ্টের খেসারতে বাড়বে খরচ। পাশাপাশি, সোনির প্রাথমিক শিক্ষিকার চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।
গোড্ডার বাসিন্দা ২৬ বছরের ধনঞ্জয় পেশায় রাঁধুনি। সোনি মধ্যপ্রদেশ প্রাথমিক শিক্ষা ডিপ্লোমা কোর্সের (ডিএলএড) ছাত্রী। ধনঞ্জয় জানিয়েছেন, মাধ্যমিক পরবর্তী এই পাঠক্রমের খরচ মধ্যপ্রদেশে অনেকটাই কম। তাই ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা হলেও ২৪ বছরের সোনি গ্বালিয়রের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০১৮ ভর্তি হয়েছিলেন।
লকডাউন পরবর্তী আবহে মধ্যপ্রদেশ শিক্ষা দফতর ডিএলএড পরীক্ষার নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছিল। কিন্তু যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু না হওয়ায় চিন্তায় পড়েন দম্পতি। স্থানীয় গাড়ি চালকেরা গ্বালিয়রে যাতায়াতের জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে রোজগার বাড়ন্ত। তাই শেষ পর্যন্ত সোনিকে নিয়ে স্কুটারেই গ্বালিয়র যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ধনঞ্জয়।
আরও পড়ুন: মস্কোয় চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন জয়শঙ্কর
সোনির গয়না বন্ধক রেখে ১০ হাজার টাকা পথ-খরচের সংস্থান করেন ধনঞ্জয়। এর পরে গত ২৮ অগস্ট সকালে গোড্ডা থেকে রওনা হয়ে মুজফ্ফরপুর, লখনউ, আগরা হয়ে ৩০ অগস্ট সকালে গ্বালিয়রে পৌঁছন তাঁরা। সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্য কার্যত একটানা দ্বিচক্রযান চালিয়েছেন ধনঞ্জয়। পথে টোল প্লাজা ও হোটেলে কোনওরকমে রাত কাটিয়েই ফের ছুট। পথে বৃষ্টি এবং বন্যাকবলিত এলাকায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও সময় মতোই গন্তব্যে পৌঁছন সোনি।
আরও পড়ুন: ‘নতুন নিয়োগে বাধা নেই’, সার্কুলার-বিতর্কে সাফাই কেন্দ্রের
হেমব্রম দম্পতির খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পরে একটি শিল্পসংস্থা তাঁদের বিমানে ঝাড়খণ্ডে ফেরানোর ব্যবস্থা করে। পরীক্ষা পর্ব শেষ হওয়ার পরে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর ভায়া হায়দরাবাদ ও রাঁচি বিমানবন্দরে ফিরবেন তাঁরা। সেখান থেকে ফেরার গাড়ির ব্যবস্থাও করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাই ধনঞ্জয় জানিয়েছেন, তাঁর অনুপ্রেরণা বিহারের ‘মাউন্টেন ম্যান’ দশরথ মাঁঝি। যিনি স্ত্রীর স্মৃতিতে একটা পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিলেন। আর সোনি জানিয়েছেন, ‘‘পরীক্ষা ঠিকঠাক হলেও, দীর্ঘ যাত্রাপথের ধকল বেশ কাবু করে ফেলেছে তাঁকে।