কানপুর জিআরপিতে শ্যামলাল। (ডান দিকে) মুলায়ম সিংহ যাদবকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সে। ছবি সৌজন্য টুইটার।
সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিংহ যাদব আর নেই। হোমেরই এক বন্ধুর কাছ থেকে খবরটা পেয়েছিল বছর দশেকের শ্যামলাল যাদব। খবরটা শোনার পর থেকেই তাঁর প্রিয় নেতাকে শেষ বারের মতো কাছ থেকে দেখে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মন ছটফট করছিল তাঁর। কিন্তু কী ভাবে সেই ইচ্ছা পূরণ হবে তাঁর ভেবেই পাচ্ছিল না ছোট্ট শ্যামলাল।
শেষমেশ হোম থেকে পালানোর ছক কষে সে। উত্তরপ্রদেশের মহারাজগঞ্জের লক্ষ্মীপুরের একটি হোমে থাকে শ্যামলাল। হোম থেকে পালিয়ে প্রথমে লক্ষ্মীপুর স্টেশনে যায়। সেখান থেকে ট্রেনে গোরক্ষপুরের সাইফাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। বছর দশেকের একটি ছেলে একা একা ট্রেনে কোথায় যাচ্ছে? সন্দেহ হয় কয়েক জন আরপিএফ কর্মীর। এর পরই তাঁরা যোগাযোগ করেন কানপুর স্টেশনের জিআরপির সঙ্গে।
শ্যামলাল তখনও জানত না যে ইচ্ছা নিয়ে সে হোম থেকে পালিয়ে এসেছে, মাঝপথেই তা থমকে যাবে। কানপুরে ট্রেন থামতেই শ্যামলালকে ট্রেন থেকে নামিয়ে জিআরপি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কেন তাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হল, কেনই বা তাকে আটকে রাখা হচ্ছে, সব ঘটনাগুলিই যেন ছোট্ট মাথায় তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল।
এক জিআরপি আধিকারিক শ্যামলালকে প্রশ্ন করেন, কোথায় থাকে সে, একা একা ট্রেনে কোথায় যাচ্ছিল ইত্যাদি। তখন শ্যামলাল বলে, “শুনেছি মুলায়ম সিংহ যাদব মারা গিয়েছেন। আমার প্রিয় নেতা। ওঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গোরক্ষপুর যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন পুলিশ আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছে। বাড়ির লোককে খবরও দিয়েছে।”
শ্যামলালের বাড়ির লোককে খবর দেওয়া হয় কানপুর জিআরপি থেকে। শ্যামলালের বাবা শিবকুমার যাদব বুধবার রাতে কানপুর থেকে ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যান। শ্যামলালের ইচ্ছার কথা পৌঁছেছিল সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের কাছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে শিবকুমার বলেন, “শ্যামলালের ইচ্ছার কথা জানতে পেরে মহারাজগঞ্জের দলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অখিলেশ যাদব। শ্যামলালকে সাইফাইতে নিয়ে যেতে বলেন। তার পরই শ্যামলালকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। মুলায়ম সিংহকে শেষ শ্রদ্ধাও জানিয়েছে শ্যামলাল।”
তার প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর ইচ্ছা অপূর্ণ থাকবে এটা ভেবে মুষড়ে পড়েছিল ছোট্ট শ্যামলাল। কিন্তু তার সেই ইচ্ছাপূরণ করলেন খোদ অখিলেশ। শুধু ইচ্ছাপূরণই নয়, শ্যামলালের পড়াশোনার খরচ দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন অখিলেশ।