গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্প। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের ৬টি ডিটেনশন শিবিরে তিন বছরের বেশি বন্দি থাকা ৩৩৫ জনের মধ্যে এত দিনে মাত্র ১০ জন শর্তাধীন জামিনে মুক্তি পেলেন।
পুলিশের সীমান্ত শাখা সূত্রের খবর, সম্প্রতি গোয়ালপাড়া ডিটেনশন শিবির থেকে এক মহিলা ও পাঁচ বাঙালি-সহ ন’জন ‘চিহ্নিত বিদেশি’ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। প্রত্যেকের মুক্তির বিনিময়ে দু’জন করে ‘ভারতীয়’ জামিনদার ও ২ লক্ষ টাকার বন্ড জমা দিতে হয়েছে। মুক্তির আগে তাঁদের সম্পূর্ণ বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করেছে প্রশাসন। প্রতি সপ্তাহে তাঁদের স্থানীয় থানায় হাজিরা দিতে হবে।
ডিটেনশন শিবিরগুলিতে এখনও বন্দি আছেন ১১৪১ জন ‘বিদেশি’। আর পাঁচ দিন পরেই এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হতে চলেছে। আশা ছিল, তার আগেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বাকি ৩২৬ জনও মুক্তি পাবেন। কারা মুক্তি পেলেন সেই নামও সরকারি ভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না। প্রশাসনের যুক্তি, সামাজিক নিরাপত্তার কারণেই নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। সমাজকর্মী শান্তনু মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, জামিনপ্রাপ্তরা নতুন সমস্যার মুখে পড়েছেন। তাঁদের লিখে আসতে হয়েছে যে তাঁরা বিদেশি। এ কথা স্বীকার করে আসায় তাঁরা ফের নিজেদের ভারতীয় বলে দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন না।
সীমান্ত শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্পেশ্যাল ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত জানান, বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। অনেক কিছু সংগ্রহ করতে হয়। এত হুড়োহুড়ি করে তা সম্ভব নয়। যাঁরা জামিন পাচ্ছেন, তাঁদের সামাজিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নাম প্রকাশ করাও উচিত নয়। স্বরাষ্ট্র সচিব আশুতোষ অগ্নিহোত্রী জানান, বাকিদের মুক্তির কাজ চলছে। তবে আইনজীবী আমন ওয়াদুদের অভিযোগ, ‘‘তিন বছরের উপর বন্দি আছেন— এমন ৪ জনের হয়ে তিনি মামলা লড়ছেন। সব শর্ত পূরণ হলেও বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত করা হচ্ছে।’’
আজ অসম বিজেপি সভাপতি রণজিৎ দাস বলেন, ‘‘নিজের খেয়ালখুশিতে কাজ করছেন এনআরসি কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের কোনও ভূমিকাই রাখেনি। এই পরিস্থিতিতে বিদেশিমুক্ত এনআরসি আশা করাই যায় না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেক ভারতীয়ের নামও বাদ পড়তে চলেছে। সে কারণে আমরা বাদ পড়াদের পাশেই দাঁড়াব।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরাও বলেন, ‘‘কোনও প্রকৃত ভারতীয়ের নাম বাদ পড়লে কংগ্রেস আইনি সাহায্য দেবে।’’ তাঁর দাবি, বাদ পড়াদের অবিলম্বে জানালে তাঁদের আইনি সাহায্য নিতে সুবিধা হবে।