৫। ভুবনেশ্বরী:
দশমহাবিদ্যার পঞ্চম রূপ ভুবনেশ্বরী। তন্ত্র শাস্ত্রে জানা যায়, মহাদেবের উপর অভিমান ও রাগে দেবী ষোড়শী রূপ ধারণ করেন এবং শিবের বক্ষে নিজের এই নতুন রূপের ছায়া দেখে নিজেই ভীত হন। পরে সেই ছায়া নিজের জেনে স্থির হন। দেবীর এই সুস্থির রূপ ভুবনেশ্বরী রূপে চিত্রিত হয়েছে। এই দেবীর গায়ের রং জবা ফুলের মতো। চার হাতে অস্ত্র ও বরাভয় মুদ্রা। চার দিকে চার জন দেবী এই দেবীকে ঘিরে আছেন। দেবীর আরও সহচরী আছে।
৬। ভৈরবী:
দশমহাবিদ্যার ষষ্ঠ রূপ দেবী ভৈরবী। ইনি চতুর্ভুজা, হাতে অক্ষমালা। দেবী অস্ত্রহীন। এই দেবী বিদ্যা ও ধনদাত্রী। চৌষট্টি যোগিনীদের মধ্যে প্রধানের নাম ভৈরবী। ইনি শিবের ন্যায় স্ত্রী মূর্তি, ইনি সঙ্গীতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন: দশমহাবিদ্যার দশ রূপ ও তার ব্যাখ্যা (প্রথম পর্ব)
৭। ধূমাবতী:
দশমহাবিদ্যার সপ্তম রূপ দেবী ধূমাবতী। একদিন কৈলাশে পার্বতী প্রচণ্ড ক্ষুধায় কাতর হয়ে বারবার শিবের কাছে অন্ন চান। কিন্তু ঘরে একটা চালও নেই। ক্ষুধার জ্বালায় ক্ষিপ্ত হয়ে শিবকে গ্রাস করে ফেলেন দেবী। সঙ্গে সঙ্গে দেবীর দেহ হতে ধোঁয়া নির্গত হতে থাকে। সেই ধোঁয়া পার্বতীকে বিবর্ণ করে দেয়। ধোঁয়ার আবৃত দেহ থেকে শিব বের হয়ে বলেন, ‘তুমি যখন ক্ষুধায় আমাকে গ্রাস করেছ তখন তুমি বিধবা হয়েছ। এই বিধবা বেশে তুমি ধূমাবতীরূপে পূজিতা হবে। তাই ধূমাবতী বিধবা,শিবহীন, ভয়ঙ্করী, রুক্ষ মলিন বসনা, বিবর্ণ কুণ্ডলা, বিরল দন্তা, নিত্য বুবুক্ষিতা, অতিকৃশা, বৃদ্ধা। ধূমাবতীর দুই হাত, একহাতে কুলা ও অন্য হাতে ধর। ইনি রথরূঢ়া। রথের ধ্বজ চারটিতে চারটি কাক।
৮। বগলা:
দশমহাবিদ্যার অষ্টম রূপ বগলা। রুরু নামক দৈত্যের পুত্র দুর্গম দেবতাদের চেয়ে বলশালী হওয়ার জন্য ব্রহ্মার তপস্যা করে বরপ্রাপ্ত হন। দেবতারা তখন দেবী ভগবতীর আরধনা করেন। দেবী আর্বির্ভূত হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। দেবীর গায়ের বর্ণ পীত। বসন পীত বর্ণ। সুধা সমুদ্রের মাঝে সিংহাসনে উপবিষ্টা। এঁর বাহন শব। দ্বিভূজ দেবী বাম হাতে দুর্গম অসুরের জিহবা ধরে ডান হাতে গদা দিয়ে শত্র দমন করেন। এই যুদ্ধে দেবীর দেহ হাতে কালী, তারা, ভৈরবী, রমা, মাতঙ্গী, বগলা,কামাক্ষী, জম্ভিনী, মোহিনী, ছিন্নমুণ্ডা, গুহ্যকালী প্রভৃতি মহাশক্তি বের হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।
৯। মাতঙ্গী:
দশমহাবিদ্যার নবম রূপ হল মাতঙ্গী। দেবী শ্যামবর্ণা, ত্রিনয়না, চতর্ভূজা ও সিংহাসনে উপবিষ্টা। এর সন্তান হাতি। মাতঙ্গ মুনির আশ্রমে দেবতারা আরাধনায় ইনি মাতঙ্গ মুনির স্ত্রীর শরীর থেকে বের হয়ে শুম্ভ ও নিশুম্ভ দৈত্যদের বধ করেন।
১০। কমলা:
দশমহাবিদ্যার শেষ বা দশম রূপ ঐশ্বর্য লক্ষ্মী কমলা। কমলার উৎপত্তি সমুদ্র মন্থনের সময়। দেবী চতুর্ভূজা। দেবীর দুই ডান হাতে পারিজাত পুষ্প, বাম দিকে উপর হাতে বরমুদ্রা, সমুদ্রের মধ্যে দেবী প্রস্ফুটিত পদ্মে আসীন। দুই পাশে দুইটি হাতি শুড় দিয়ে কলসে করে জল নিয়ে দেবীকে স্নান করাচ্ছে। আবার চণ্ডীর একরূপ কমলে কামিনী। ধনবতৃী সওদাগরের পুত্র সুমন্ত সিংহলে যাওয়ার সময় এই রূপ দেখেছিলেন। এই ভাবে দশটি মূর্তিতে কখনও ভীষণ দর্শনা, আবার কখনও শান্ত সৌম্য মূর্তিতে মহাদেবের প্রীতি উৎপাদন করে সতী স্বামীর অনুমতি আদায় করে পিতৃগৃহে যাত্রা করেন। মহাদেবের বরে এই দশটি মূর্তিই দশমহাবিদ্যা হিসাবে পূজিতা হন।