কামিকা একাদশী ব্রতের নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি।
শ্রাবণ কৃষ্ণপক্ষীয়া কামিকা একাদশীর কথা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ-সংবাদে বলা হয়েছে। যুধিষ্ঠির মহারাজ শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, হে গোবিন্দ! হে বাসুদেব! শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম এবং মাহাত্ম্য সবিস্তারে আমার কাছে বর্ণনা করুন। তা শুনতে আমি অত্যন্ত কৌতুহলী। প্রত্যুত্তরে ভক্তবৎসল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে রাজন! পূর্বে দেবর্ষি নারদ প্রজাপতি ব্রহ্মাকে এই প্রশ্ন করলে তিনি যে উত্তর প্রদান করেছিলেন আমি এখন সেই কথাই বলছি। আপনি মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ করুন।
এক সময় ব্রহ্মার কাছে ভক্তশ্রেষ্ঠ নারদ জিজ্ঞাসা করলেন, হে ভগবান! শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম কী, এর আরাধ্য দেবতা কে, সেই ব্রতের বিধিই বা কী রকম এবং এই ব্রতের ফলে কী পূণ্য লাভ হয় তা সবিশেষ জানতে ইচ্ছা করি। আপনি কৃপা করে আমাকে তা জানালে আমার জীবন ধন্য হবে। শ্রীনারদের কথা শুনে ব্রহ্মা অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন। তিনি বললেন, হে বৎস! জগৎ জীবের মঙ্গলের জন্য আমি তোমার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিচ্ছি, তুমি তা শ্রবণ কর।
শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশী ‘কামিকা’ নামে জগতে প্রসিদ্ধা। এই একাদশীর মাহাত্ম্য শ্রবণে বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়। ভগবান শ্রীহরির পূজা-অর্চনা অপরিমিত পূণ্য ফল প্রদান করে। গঙ্গা, গোদাবরী, কাশী, নৈমিষ্যারণ্য, পুষ্কর ইত্যাদি তীর্থ দর্শনের সমস্ত ফল একমাত্র কৃষ্ণপূজার মাধ্যমে কোটিগুণ লাভ করা যায়। সাগর ও অরণ্য যুক্ত পৃথিবী দানের ফল, দুগ্ধবতী গাভী দানের ফল অনায়াসে এই ব্রত পালনে লাভ হয়। যাঁরা পাপের সাগরে নিমগ্ন, এই ব্রতই তাঁদের উদ্ধারের একমাত্র সহজ উপায়। এই রকম পবিত্র পাপনাশক শ্রেষ্ঠ ব্রত আর জগতে নেই। শ্রীহরি স্বয়ং এই মাহাত্ম্য কীর্তন করেছেন। রাত্রি জাগরণ করে যাঁরা এই ব্রত পালন করেন তাঁরা কখনও দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত হন না। এই ব্রত পালনকারী কখনও নিম্নযোনি প্রাপ্ত হন না।
আরও পড়ুন: সংসারে দাম্পত্য সুখ বজায় রাখতে চাইলে এই ফুল গাছগুলি অবশ্যই বাড়িতে লাগান
কেশবপ্রিয়া তুলসীপত্রে যিনি শ্রীহরির পূজা করেন পদ্মপাতায় জলের মতো তিনি পাপে নির্লিপ্ত থাকেন। তুলসীপত্র দিয়ে বিষ্ণু পূজায় ভগবান যেমন সন্তুষ্ট হন, মণিমুক্তাদি মূল্যবান রত্ন মাধ্যমেও তেমন প্রীত হন না, যিনি কেশবকে তুলসীমঞ্জরী দিয়ে পূজা করেন তার জন্মার্জিত সমস্ত পাপ ক্ষয় হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে ব্রহ্মা বললেন, হে নারদ! যিনি তুলসীকে প্রত্যহ দর্শন করেন তার সকল পাপরাশি বিদূরিত হয়ে যায়, যিনি তাঁকে স্পর্শ করেন তার পাপমলিন দেহ পবিত্র হয়, তাঁকে প্রণাম করলে সমস্ত রোগ দূর হয়, তাঁকে জল সিঞ্চন করলে যমও তাঁর কাছে আসতে ভয় পান। শ্রীহরিচরণে তুলসী অর্পিত হলে ভগবদ্ভক্তি লাভ হয়।
তাই হে কৃষ্ণভক্তি প্রদায়িনী, তোমায় প্রণাম করি। যে ব্যক্তি হরিবাসরে ভগবানের সামনে দীপদান করেন চিত্রগুপ্তও তাঁর পূণ্যের সংখ্যা হিসাব করতে পারেন না। তাঁর পিতৃপুরুষেরাও পরম তৃপ্তি লাভ করেন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে রাজন! আমি আপনার কাছে সর্বপাপহারিনী ‘কামিকা’ একাদশীর মাহাত্ম্য বর্ণনা করলাম। অতএব যিনি ব্রহ্মহত্যা ভ্রুণহত্যা-পাপবিনাশিনী, মহাপুণ্যফলদায়ী এই ব্রত পালন করবেন ও এই মাহাত্ম্য শ্রদ্ধা সহকারে পাঠ অথবা শ্রবণ করবেন তিনি সর্বপাপ থেকে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গমন করবেন।
এখন জেনে নেওয়া যাক ১৪২৬ সালের কামিকা একাদশীর নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত ও গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে:
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:
একাদশী আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ১০ শ্রাবণ ১৪২৬, শনিবার।
ইং তারিখ: ২৭/০৭/২০১৯।
সময়: রাত্রি ঘণ্টা ০৭/৪৬ মিনিট থেকে।
একাদশী শেষ:
বাংলা তারিখ: ১১ শ্রাবণ ১৪২৬, রবিবার।
ইং তারিখ: ২৮/০৭/২০১৯।
সময়: রাত্রি ঘণ্টা ০৬/৫০ মিনিট পর্যন্ত।
একাদশীর উপবাস:
বাংলা তারিখ: ১১ শ্রাবণ ১৪২৬, রবিবার।
ইং তারিখ: ২৮/০৭/২০১৯।
সময়: রাত্রি ঘণ্টা ০৬/৫০ মিনিট পর্যন্ত।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে:
একাদশী আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ১০ শ্রাবণ ১৪২৬, শনিবার।
ইং তারিখ: ২৭/০৭/২০১৯।
সময়: দিবা ঘ ৩/৩৬ মিনিট থেকে।
একাদশী শেষ:
বাংলা তারিখ: ১১ শ্রাবণ ১৪২৬, রবিবার।
ইং তারিখ: ২৮/০৭/২০১৯।
সময়: দিবা ঘণ্টা ০৩/০৭ মিনিট পর্যন্ত।
একাদশীর উপবাস:
বাংলা তারিখ: ১১ শ্রাবণ ১৪২৬, রবিবার।
ইং তারিখ: ২৮/০৭/২০১৯।
সময়: দিবা ঘণ্টা ০৩/০৭ মিনিট পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: শনি ও রাহুর কুপ্রভাবে ভুগছেন? জীবনে সাফল্য আনতে এই কুঅভ্যাসগুলো ত্যাগ করুন