প্রথমত জেনে নেওয়া যাক অম্বুবাচী কী?
অম্বুবাচী হিন্দুধর্মের বাৎসরিক উৎসব। অম্বুবাচীকে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতীও বলে। হিন্দুদের শাস্ত্রে পৃথিবীকে মা বলা হয়ে থাকে। বেদেও একই রকম ভাবে তাঁকে মা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার পৌরাণিক যুগেও পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আষাঢ মাসে রবি মিথুন রাশিস্থ আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথমপাদে অর্থাৎ এক চতুর্থাংশ স্থিথিকালে পৃথিবী বা ধরিত্রী মা ঋতুময়ী হন। সেই সময়টিতে অম্বুবাচী পালন করা হয়। অর্থাৎ এই প্রচলিত আচারের পিছনে রয়েছে পৃথিবী আমাদের মা, এই বিশ্বাস৷
পৃথিবীতেই তো মানুষের জন্ম। শুধু মানুষ নয়, ফুল, পাখি, প্রকৃতি এক কথায় সবাই তো পৃথিবীর সন্তান। মহাজাগতিক ধারায় পৃথিবী যখন সূর্যের মিথুন রাশিস্থ আর্দ্রা নক্ষত্রে অবস্থান করে, সে দিন থেকে বর্ষাকাল শুরু ধরা হয়। পাশাপাশি আমরা জানি, মেয়েরা ঋতুকাল বা রজঃস্বলা হন এবং এক জন নারী তার পরই সন্তান ধারণে সক্ষম হন। ঠিক তেমনই প্রতি বছর অম্বুবাচীর এই তিন দিনকে পৃথিবীর ঋতুকাল হিসেবে ধরা হয়।
ধর্মীয় আচার হলেও এর সঙ্গে প্রাচীন কৃষি ব্যবস্থা জড়িয়ে থাকায় এটির একটি সামাজিক প্রভাবও রয়েছে। ফলে অম্বুবাচী একটি কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠানও। এর অর্থ ধরিত্রীর উর্বরাকাল। এই তিন দিন জমিতে কোনও রকম চাষ করা হয় না। উর্বরতাকেন্দ্রিক কৃষিধারায় নারী এবং ধরিত্রী সমার্থক বলে গণ্য করা হয়। সেই ধ্যানধারণা থেকেই আষাঢ় মাসের শুরুতে পৃথিবী বা মাতা বসুমতী যখন বর্ষার নতুন জলে সিক্ত হয়ে ওঠেন তখন তাঁকে ঋতুমতী নারী রূপে গণ্য করা হয়৷
তখন শুরু হয় অম্বুবাচী প্রবৃত্তি। ঠিক তিন দিন পরে যেটা শেষ হয়, সেটা হল অম্বুবাচী নিবৃত্তি। প্রাচীন কাল থেকেই এই নিবৃত্তির পরই ফের জমিতে চাষাবাদ করতেন কৃষকেরা। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋতুকালে মেয়েরা অশুচি থাকেন। একই ভাবে পৃথিবীও এই অম্বুবাচী বা অমাবতির তিন দিন অশুচি থাকেন বলে ধরে নিয়ে চাষিরা আর মাঠে যান না। এখনও বিভিন্ন জায়গায় এই নিয়ম মেনে চলা হয়।
আরও পড়ুন: অম্বুবাচীতে কী করা উচিত এবং কী নয়
দেখে নেওয়া যাক অম্বুবাচী কারা পালন করেন:
ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই অম্বুবাচী রজঃউৎসব নামেও পালিত হয়। আবার এ সময় যাঁরা ব্রহ্মচর্য পালন করেন, যেমন ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী,যোগীপুরুষ, বিধবা মহিলা— কেউই ‘অশুচি’ পৃথিবীর উপর আগুনের রান্না করা কিছু খান না। বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে এই তিন দিন কাটান। এই কারণে এখনও পরিবারে বয়স্ক বিধবা মহিলাদের তিন দিন ধরে অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে ব্রত পালন করতে দেখা যায়৷
এখন দেখে নেওয়া যাক, ১৪২৬ সনের অম্বুবাচীর সময় ও নির্ঘণ্ট বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত ও গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে:
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:
অম্বুবাচী প্রবৃত্তি:
বাংলা তারিখ: ৭ আষাঢ় ১৪২৬, শনিবার।
ইং তারিখ: ২২/০৬/২০১৯।
সময়: বিকেল ৫টা ১৯ মিনিট পরে অম্বুবাচী আরম্ভ।
অম্বুবাচী নিবৃত্তি:
বাংলা তারিখ: ১১ আষাঢ় ১৪২৬, বুধবার।
ইং তারিখ: ২৬/০৬/২০১৯।
সময়: সকাল ৫টা ১১ মিনিট পরে অম্বুবাচী সমাপ্তি।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে:
অম্বুবাচী প্রবৃত্তি:
বাংলা তারিখ: ৬ আষাঢ় ১৪২৬, শনিবার।
ইং তারিখ: ২২/০৬/২০১৯।
সময়: রাত্রি ১টা ৪০ মিনিট পরে অম্বুবাচী আরম্ভ।
অম্বুবাচী নিবৃত্তি:
বাংলা তারিখ: ১০ আষাঢ় ১৪২৬, বুধবার।
ইং তারিখ: ২৬/০৬/২০১৯।
সময়: দিবা ২টো ০৪ মিনিট পরে অম্বুবাচী সমাপ্তি।