বোনেরা যে মন্ত্রটি উচ্চারণ করে ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেয়, তা হল ‘যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই ভাইকে ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা’। এটাই তিন বার বলতে হয়। বোনেরা প্রথমে বাঁ হাতের কড়ে আঙ্গুলের দ্বারা ভাইয়ের কপালে টিকা দেয়। পরে দুই কানের লতিতে দুটো টিকা দেয় ও শেষে কন্ঠনালিতে একটি টিকা দেয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বাম হাতের কড়ে আঙ্গুলে দিতে হয়?
নারী প্রকৃতিস্বরূপা এবং কড়ে আঙুল হচ্ছে মহাশূন্যের প্রতীক। তাই কড়ে আঙুলে ফোঁটা দেওয়া হয়। আমাদের হাতের আঙুলগুলোতে পঞ্চমহাভূত ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম অবস্থান করে। এই ব্যোমই হচ্ছে কড়ে আঙুল। কড়ে আঙ্গুলই মহাশূন্যের প্রতীক। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, ভাইবোনের ভালবাসা যেন আকাশের মতো উদার হয়, অসীম ও অনন্ত হয়।
ভাইবোনেরা প্রতীকী হিসাবে তাদের ভাইয়ের প্রতি ভালবাসাকে অসীম ও অনন্ত করতে এই রূপ করে থাকে।
কেন কপালে টিকা দেওয়া হয়?
যেহেতু আমাদের কপাল চেতনার প্রথম স্তর, তাই কপালে টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। সাংসারিক ভাবনায় কপাল হচ্ছে ভাগ্যের স্থান। তাই বোনেরা ভাইয়ের সৌভাগ্য কামনায় এই রূপ করে থাকে। কানের লতিতে দেওয়ার কারণ হল, কান হল শ্রবণ অঙ্গ। আর জগৎ ধ্বনিময়। সেই ধ্বনিতেই ব্রহ্মের পদধ্বনি অনুচ্চারিত হচ্ছে। ভাইয়ের কর্ণে যেন সেই ব্রহ্মধ্বনি শ্রুত হয়।
কেন কণ্ঠে টিকা দেওয়া হয়?
যেহেতু কণ্ঠ থেকে বাক্যের প্রকাশ, তাই বোনেরা কণ্ঠে টিকা দিয়ে থাকে। যাতে ভাইয়ের বাক্য মধুর হয়। বাক্যই মাতা। এই টিকা কিন্তু শুধুই মাঙ্গলিক নয়। শরীরে বিশেষ বিশেষ স্থান মাহাত্ম্যেরও প্রতীক। বৈষ্ণবগণ দ্বাদশ টিকায় নিজেদের চিহ্নিত করে থাকেন।